close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

যে রিকশাচালকের সাথে একই জেলে ছিলেন আখতার; স্মৃতি হাতড়ে কাঁদলেন দুজনেই..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Years later, politician Akhtar Hossain reunites with his former prison mate—an emotional rickshaw puller. Tears, memories, and hopes for a fair Bangladesh unfold in a rare political moment.

একটি অশ্রুসজল মুহূর্ত তৈরি হলো যখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সঙ্গে বহুদিন পর দেখা হলো তার সেই পুরোনো সহবন্দী রিকশাচালক রাজুল ইসলামের। রাজনৈতিক সভার প্যান্ডেলে হঠাৎ মুখোমুখি হওয়া এই দুই মানুষ যেন ফিরে গেলেন সেই ঘোর অন্ধকার সময়ের জেলজীবনে।

রাজুল ইসলাম, একজন সাধারণ রিকশাচালক, দাঁড়িয়ে আখতার হোসেনের চোখের দিকে চেয়ে বললেন—"ভাইরে, আপনি তো আমার জেলখানার শঙ্খ ছিলেন। আপনার কবিতা শুনে ভয় পাইতাম। মনে হইছিল, কেউ আপনারে মাইরাই ফেলবে। তখন সবাই চিৎকার করতেছিল—শেখ হাসিনা পালায়া গেছে, পালায়া গেছে!" সেই সময়ের আতঙ্ক, আবেগ, আশা—সব মিলিয়ে রাজুলের চোখে জল।

আখতার হোসেনও স্থির থাকতে পারেননি। তিনি বললেন, “জুলাইয়ের সেই অন্ধকার সময়টাতে আমরা সবাই এক হয়ে গিয়েছিলাম। তখন কেউ রিকশাচালক, কেউ গার্মেন্টস কর্মী, কেউ মাদ্রাসা ছাত্র—কিন্তু সবাই ছিল এক পতাকার নিচে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম এক বৈষম্যহীন, পেশিশক্তিমুক্ত বাংলাদেশ।

রিকশাচালক রাজুল কণ্ঠ রুদ্ধ করে বলেন, “ভাই, আমি কোনো দলের না। আমি রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু আপনার মতো কেউ যদি সামনে আসে, আমরা সাহস পাই। আমি আজ গ্যারেজে গাড়ি রেখে আসছি, শুধু আপনার সাথে দেখা করার জন্য। আমি চাই, আমরা যেন আপনাদেরকেও সমালোচনা করতে পারি। এটা যদি করতে পারি, তাহলেই তো বুঝবো স্বাধীন দেশে বাস করছি।

আখতার হোসেন তখন বলেন, “এই কথাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি এমন হওয়া উচিত, যেখানে মানুষ প্রশ্ন করতে পারে। আমরা চাই, কেউ যেন 'তুই-তোকারি' না করে। রিকশাওয়ালা হোক আর সচিব—সবার মর্যাদা থাকুক।”

তিনি আরও বলেন, “পেশিশক্তির যে রাজনীতি, তা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতেই আমরা রাজপথে। আমি চাই না কেউ আবার জেলে যাক, কেউ যেন ভয় পায় না।

রাজুল তখন বলেন, “আপনারা যদি নিজেরা ব্যবসা না করে দেশের জন্য করেন, তবে আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। আমি জানি, আপনি ব্যবসা না, দেশের জন্যই কাজ করছেন। এইজন্য এতদূর থেকে আসছি দেখা করতে।

স্মৃতি হাতড়ে দুই জনই কিছুক্ষণের জন্য নিঃশব্দ। এ যেন রাজনীতির বাইরে এক মানবিক পুনর্মিলন। শেষ মুহূর্তে আখতার হোসেন বলেন, “এই রাজবন্দী ভাইয়ের মতো মানুষের কারণেই আমরা সাহস পাই। ইনশাল্লাহ, আমরা এই কষ্টের জয় করবো।”

এই মুহূর্তটি কেবল রাজনৈতিক নয়—এটি একটি জীবনের গল্প। একদিকে একজন নেতা, অন্যদিকে একজন রিকশাচালক। তাদের পথ আলাদা হলেও হৃদয়ের জায়গা এক। এই পুনর্মিলন দেখিয়ে দিলো—মানবতা আর মর্যাদার রাজনীতি এখনো হারিয়ে যায়নি।

No comments found