পিরোজপুরে নির্বাচনী গণসংযোগে মাসুদ সাঈদী প্রশ্ন তুলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করলে আন্দোলনের মানে কী? ভাষা ও জুলুমে পরিবর্তন না এলে এত মানুষের জীবন গেল কেন?
পিরোজপুর-১ আসনের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদী সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন—যদি ভাষা, আচরণ ও জুলুমে পরিবর্তন না আসে, তবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এত ত্যাগের কি প্রয়োজন ছিল? শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শেখমাঠিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা বাজারে এক গণসংযোগে এসব প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, যে ভাষায় আওয়ামী লীগ কথা বলতো, যে ভাষায় রাজনীতি করতো, আজ দেখি আমাদের কিছু বন্ধুরাও সেই একই ভাষায় কথা বলছেন, একই স্টাইলে রাজনীতি করছেন। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়—তাহলে আন্দোলন কেন করলাম? যদি সেই একই জুলুম চলে, একই দমননীতি চলে, তাহলে তো আমরাই নিজেদের সাথে প্রতারণা করছি। এত মানুষ জীবন দিল কেন?
মাসুদ সাঈদী অভিযোগ করে বলেন, ১৫ বছর আওয়ামী লীগ রাজাকারের নামে রাজনীতি করেছে, রাজাকারের বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করেছে। অথচ আজ তাদেরই কিছু ‘বন্ধু’ আবার রাজাকারের নামে ব্যবসা শুরু করেছে। যাদের সঙ্গে একুশ বছর জোট করে আন্দোলন করলেন, তখন তারা কি রাজাকার ছিল না? আজকে হঠাৎ করেই জামায়াত রাজাকার হয়ে গেল? এটা কি রাজনৈতিক সুবিধাবাদ নয়?
তিনি আরও বলেন, এই সব বিভ্রান্তিকর কথা, রাজাকারের তত্ত্ব, ভারতের শেখানো বুলি। ভারতের কিছু দালাল আছেন, যারা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজন তৈরি করছেন। আওয়ামী লীগ যেমন এই বিভাজনের রাজনীতি করতো, আজ তারাই আবার সেই পথ দেখাচ্ছে।
নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট চেয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, “যখন মসজিদের ইমাম নির্বাচন করেন, তখন তো যাচাই করেন—সে নামাজি কিনা, চরিত্র কেমন, পরিবার কেমন। তাহলে একজন সংসদ সদস্য যিনি লাখো মানুষের নেতা হবেন, তাকে যাচাই করবেন না কেন? যদি করেন না, তাহলে নিশ্চিত থাকেন—আবারও ১৫ বছরের জালিম ফিরে আসবে, আবারও দুর্নীতির সরকার আমাদের শাসন করবে।
এ সময় তিনি নিজের বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার বাবা শহীদ আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পিরোজপুরের উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু জালিমরা তা সহ্য করতে পারেনি। মিথ্যা অপবাদে তাকে ১৩ বছর কারাগারে রেখে হত্যা করেছে। আমি আপনাদের খাদেম হতে পারলে, তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করবো ইনশাআল্লাহ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সাকিবুল ইসলাম, ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব এবং সেক্রেটারি জাকির হোসেন। গণসংযোগটি পরিণত হয় এক ধরনের পথসভায়, যেখানে উপস্থিত জনতার কাছ থেকে বারবার করতালির মাধ্যমে সাড়া পাওয়া যায়।
মাসুদ সাঈদী তার বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন, দেশের রাজনৈতিক মাঠে কেউ যদি আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করতে থাকে, তবে আন্দোলনের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তিনি আহ্বান জানান, মানুষ যেন নেতার ব্যক্তি চরিত্র, রাজনৈতিক অবস্থান ও অতীত ত্যাগ যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নেয়—অনুভূতিতে না, বিবেকে ভোট দেয়।