আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার ঢেউ তুলেছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির কড়া হুঁশিয়ারি। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভয়াবহ সংঘাতের দ্বার খুলেছে। যদি এই ঘটনার সুষ্ঠু জবাবদিহি নিশ্চিত না করা হয়, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে যুদ্ধের আগুন।
তিনি জানান, গত মাসে ইসরায়েল যে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির চরম লঙ্ঘন। শুধু ইসরায়েলই নয়, যুক্তরাষ্ট্রও এই হামলায় সম্পৃক্ত, কারণ ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে আমেরিকার পক্ষ থেকেও। আরাগচির এই মন্তব্যে পরিষ্কার, ইরান এখন সরাসরি ওয়াশিংটনকেও দায়ী করছে।
আরাগচির ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশন ২২৩১ এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-এর সরাসরি লঙ্ঘন। এই চুক্তিগুলোর মাধ্যমে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। অথচ সেই অনুমোদিত স্থাপনাগুলোই আজ হামলার শিকার।
তিনি আরও বলেন, যদি ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনা না হয়, তাহলে শুধু আমরা নয়, পুরো অঞ্চলকেই এই সংকটের মূল্য দিতে হবে।
রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস প্লাস সম্মেলনে ইরান এই ইস্যুতে অন্যান্য সদস্য দেশের সমর্থন পেয়েছে। ১১টি দেশের এই জোট ইরানের বিরুদ্ধে চালানো হামলার বিরুদ্ধে কড়া বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, “ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক অবকাঠামো ও শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল।”
যদিও বিবৃতিতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, তবে ১৩ জুন থেকে চালানো হামলার কথা উল্লেখ করে স্পষ্টতই বোঝানো হয়েছে কারা এর পেছনে রয়েছে।
ইসরায়েলের টানা ১২ দিনের হামলায় ইরানে প্রাণ হারিয়েছে ৯৩৫ জন, আহত হয়েছে ৫,৩৩২ জন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে, যাতে ২৯ জন নিহত এবং ৩,৪০০ জন আহত হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে বিশ্ব নতুন এক অঘোষিত পারমাণবিক সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ২৪ জুন থেকে দুই দেশ আপাতত যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ যুদ্ধবিরতি আসলে অস্থায়ী। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনার বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত না করে, তবে এই আগুন আবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে।
ইরান এখন আর কূটনৈতিক নরম বার্তা দিচ্ছে না, বরং সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে— ইসরায়েল ও তার মিত্রদের থামানো না গেলে, পরিণতি ভয়াবহ হবে। ব্রিকস সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়ে তেহরান আরও সাহসী হয়ে উঠেছে। ফলে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি এখন নতুন মোড়ে।