ফাঁস হওয়া এক অডিওতে শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টিকে ‘জিন্দা লাশ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তাদের প্রয়োজন নেই। বিষয়টি প্রকাশের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার ঝড় উঠেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া একটি অডিও। ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে কথোপকথনের এই রেকর্ড সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি গতবছরের জুলাই আন্দোলনের সময়কার একটি ফোনালাপ।
সোমবার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ওই অডিওটি প্রকাশ করেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। রেকর্ডটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ মিনিট ২৬ সেকেন্ড, যেখানে ছাত্র আন্দোলন দমন এবং জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে সরাসরি মতামত দেন শেখ হাসিনা।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, শেখ হাসিনা নানককে উদ্দেশ্য করে বলেন—“তুমি আমাকে যা বলবা সত্যি কথা বলবা।” এর জবাবে নানক বলেন, “জি বলব।” এরপর শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, মোহাম্মদপুরের বিহারী পট্টির ভূমিকা কেমন? নানক উত্তরে জানান, ওই এলাকার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকলেও স্থানীয় কমিশনার সেন্টু জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত এবং তার অধীনে ১৫-২০ জন যুবক আছে। এরা সুবিধা নিলেও আন্দোলনে বড় কোনো ভূমিকা রাখছে না।
এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেন, “জাতীয় পার্টি দিয়ে আমাদের কি আসে যায়? দরকার নাই আমাদের জাতীয় পার্টির। জাতীয় পার্টি হইলো জিন্দা লাশ।” তাঁর এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, আন্দোলন দমনে জাতীয় পার্টির সহায়তাকে তিনি গুরুত্ব দেননি বরং তাদের রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় পার্টিকে অকার্যকর বা মৃত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। কারণ একসময় জাতীয় পার্টি ছিল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এমনকি ক্ষমতার পালাবদলের সময় তারা আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। অথচ শেখ হাসিনার এই মন্তব্য স্পষ্ট করছে, তাদের এখন আর প্রয়োজনীয় মনে করছেন না।
এর আগের দিন রোববারও সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের আরেকটি অডিও প্রকাশ করেছিলেন যেখানে শেখ হাসিনা এবং জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুর কথোপকথন শোনা যায়। সেই অডিওতে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং ছত্রীসেনা নামানোর পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
একটি পরপর দুটি অডিও ফাঁস হওয়ায় রাজনৈতিক মহল সরগরম হয়ে উঠেছে। অনেকেই বলছেন, এ ধরনের অডিও ফাঁস শুধু সরকারকেই বিপাকে ফেলছে না, বরং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে আরও অস্থির করে তুলছে। বিরোধীদলীয় নেতারা দাবি করছেন, এসব অডিও সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবকে স্পষ্ট প্রমাণ করছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এসব অডিও ফাঁস করেই একটি চক্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে শেখ হাসিনার সেই একটি লাইন—“জাতীয় পার্টি হইলো জিন্দা লাশ।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিকল্পনায় জাতীয় পার্টির আর কোনো ভূমিকা থাকবে কি না। কেউ কেউ বলছেন, এই মন্তব্য হয়তো ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতির মাঠ থেকে আরও কোণঠাসা করে দেবে।
ফাঁস হওয়া অডিওর সত্যতা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে এরই মধ্যে বিষয়টি দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।