জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. তাহের বলেছেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে উঠেছে। কুমিল্লায় এক সমাবেশে তিনি স্পষ্ট জানান, জনগণ জাতীয় পার্টিকে আর গ্রহণ করবে না এবং ভুয়া নির্বাচনের পাঁয়তারা করলে দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
জাতীয় রাজনীতিতে আবারও উত্তাপ ছড়ালেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লার ফান টাউনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি জাতীয় পার্টিকে সরাসরি ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দেন।
ডা. তাহের বলেন, “জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় টিকে আছে। তারা গণতন্ত্রকে রক্ষা না করে বরং ফ্যাসিবাদকে শক্তিশালী করছে। জনগণ এদেরকে আর গ্রহণ করবে না। সময় এসেছে মানুষকে বুঝতে হবে কারা আসল গণতন্ত্রের পক্ষে এবং কারা ক্ষমতার দালালি করছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বিএনপি ও এর বাইরে থাকা দলগুলো সমঝোতার নির্বাচনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টিকে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তার ভাষায়, “যে দলটি সবসময় ক্ষমতাসীনদের ছায়াতলে থাকে, তারা জনগণের আস্থা হারিয়েছে। তাই তাদের আর কোনো রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নেই।”
বিএনপির সম্ভাব্য বিজয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেও ডা. তাহের মন্তব্য করেন, “ভোটের আগে যদি কেউ নিশ্চিত বিজয়ের ঘোষণা দেয়, তবে বোঝা যায় তারা ভেতরে ভেতরে কোনো বিশেষ কৌশল বা ম্যাকানিজমে কাজ করছে। এভাবে আগেই বিজয় দাবি করা মানে আবারও সাজানো নির্বাচনের আশঙ্কা।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন হলে বাংলাদেশের জন্য তা হবে ভয়াবহ বিপর্যয়। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে, যারা এ ধরনের নির্বাচন আয়োজন করবে তারাও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে স্বৈরশাসকের মতো বিদায় নিতে বাধ্য হবে।
ভোটব্যবস্থা নিয়ে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে ডা. তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) পদ্ধতিকে উত্তম মনে করে। তিনি উল্লেখ করেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর এক জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ এ পদ্ধতি চায়। তাই সরকার জনগণের এই চাহিদাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিন সমাবেশ ও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা সদর আসনের জামায়াত-মনোনীত প্রার্থী কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক এ কে এমদাদুল হক মামুন, সেক্রেটারি মো. মাহবুবুর রহমানসহ আরও অনেকে। তারা ডা. তাহেরের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে প্রকৃত অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। অন্যথায় দেশ আবারও অস্থিতিশীলতার দিকে যাবে।
ডা. তাহেরের বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তি—এমন অভিযোগের মধ্যেই তাঁর কড়া বক্তব্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের মন্তব্য নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবিরে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশের জনগণও এখন সচেতন। ডা. তাহেরের দাবি—জাতি আর কোনো প্রহসনমূলক নির্বাচন দেখতে চায় না। গণতন্ত্রের জন্য সৎ ও সাহসী নেতৃত্ব প্রয়োজন, যেটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। তার মতে, জাতীয় পার্টির মতো ক্ষমতাসীন দোসররা জনগণের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে না।