ঠাকুরগাঁওয়ে এক সম্মেলনে জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, সরকার গঠন করলে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা হবে না। একইসাথে তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জামায়াত সারাদেশে ৩০০ আসনেই বিজয়ী হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে জামায়াতে ইসলামী। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির নেতারা একের পর এক বক্তব্য দিচ্ছেন। বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে জেলা জামায়াত আয়োজিত ওয়ার্ড সভাপতি-সেক্রেটারিদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। সেখানে তিনি জামায়াতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নারীর স্বাধীনতা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জনগণের আস্থার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
মাওলানা আবদুল হালিম তার বক্তব্যে দাবি করেন, যদি দেশে সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে জামায়াতে ইসলামী শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, বরং সারাদেশের ৩০০ আসনেই বিজয়ী হবে। তিনি ঠাকুরগাঁও-১ আসনসহ জেলার তিনটি আসনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “এখন মানুষের আস্থা জামায়াতের প্রতি। জনগণ বুঝতে পেরেছে আমরা তাদের পাশে আছি।”
নারীদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আবদুল হালিম বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, জামায়াত সরকার গঠন করলে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা হবে না। তবে তিনি শালীনতার বিষয়টি বজায় রাখার ওপর জোর দেন। তার মতে, কর্মক্ষেত্রে নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান সুরক্ষিত থাকবে। এই বক্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে, কারণ অতীতে জামায়াতকে প্রায়ই নারীর স্বাধীনতা সীমিত করার অভিযোগে সমালোচিত হতে হয়েছে।
এসময় তিনি ‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গও টেনে আনেন। হালিম বলেন, “জুলাই সনদকে যদি আইনি স্বীকৃতি দেওয়া না হয় তবে জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে না। এ সনদকে আইনে রূপ দিতে হবে, তা না হলে আমরা যে এক বছর পার করলাম তার মূল্য কী?” তার এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, জামায়াত নিজেদের রাজনৈতিক দাবিকে আইনি কাঠামোয় রূপ দিতে চায়।
সম্মেলনে জেলা জামায়াতের আমির বেলাল উদ্দিন প্রধান সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা আবদুল হাকিম, ঢাকা দক্ষিণের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কফিল উদ্দিনসহ আরও অনেক নেতাকর্মী। তারা সবাই মিলিতভাবে জামায়াতের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মপন্থা এবং জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব দেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের এই বক্তব্য এক ধরনের নতুন কৌশলের ইঙ্গিত বহন করছে। দীর্ঘদিন ধরে দলটি নিষিদ্ধ রাজনীতির ধারা থেকে বের হয়ে জনগণের মাঝে নতুনভাবে আস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছে। বিশেষত নারী ইস্যুতে তাদের অবস্থান পরিবর্তনের বার্তা অনেককে অবাক করেছে। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে তারা তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ ভোটারদের কাছে ইতিবাচক ইমেজ তৈরির চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, জামায়াত শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এমন অবস্থান নিচ্ছে। তবে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতারা দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, জনগণ এখন আর পুরনো প্রচারণায় কান দিচ্ছে না। বরং সাধারণ মানুষ জামায়াতকে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে এবং আগামীর নির্বাচনে এই আস্থার প্রতিফলন ঘটবে।
দিনের শেষভাগে মিলনায়তনজুড়ে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দলীয় স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন। তারা আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতকে বিজয়ী করার জন্য একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
সবমিলিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন শুধু জেলা নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নারীর স্বাধীনতা বিষয়ে জামায়াত নেতার বক্তব্য এবং ৩০০ আসনে বিজয়ের দৃঢ় প্রত্যাশা ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।