জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, প্রশাসনে প্রভাব থাকলেও জামায়াত ও এনসিপি কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা এখন কিছুটা ক্ষমতার স্বাদ পেলেও সরকার গঠনের মতো জনভিত্তি তাদের নেই।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে মন্তব্য করেছেন যে, জামায়াত ও এনসিপি বর্তমানে যেভাবে প্রশাসনিক সুবিধা পাচ্ছে এবং রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সক্রিয় করে তুলছে, তা সত্ত্বেও তারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে যেভাবে বিএনপি চাঁদাবাজি করছে, তার অন্তত ৯০ শতাংশের বেশি তারাই করছে। তবে প্রশাসনের ভেতরে জামায়াতের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। বর্তমানে প্রশাসনের ভেতরে বিএনপি ও জামায়াত প্রায় সমানভাবে অবস্থান করছে। আর এনসিপি তদবিরের মাধ্যমে উপরের স্তরে জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে।
মাসুদ কামাল স্পষ্টভাবে বলেন, “বিএনপি যদি আগামীতে ক্ষমতায় আসে, তখন কি জামায়াত বা এনসিপির লোকজন সচিবালয়ে গিয়ে প্রভাব খাটাতে পারবে? পারবে না। এখন যেসব সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছে, সেটা ক্ষমতার বাইরে থেকেই নিচ্ছে। কিন্তু যেইমাত্র বাস্তব ক্ষমতার প্রশ্ন আসবে, তখন তাদের জায়গা থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, এনসিপির সবচেয়ে বড় প্রতীক এখন ড. ইউনূস, যার নাম ঘিরে নির্বাচন ও রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানো হলেও বাস্তবে জনগণের ভোটে তারা জিততে পারবে না। “ইউনূস সাহেব ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আশায় ছিলেন, কিন্তু এখন অতিমাত্রায় হতাশ হয়ে পড়েছেন,”— বলেন মাসুদ কামাল।
মাসুদ কামাল আরও অভিযোগ করেন, এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রশাসনে যাতায়াত করে, সচিবালয়ে ঢোকে, অথচ সাংবাদিকরা সেখানে যেতে পারছে না। অনেক সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হয়ে গেছে শুধু মাত্র এই প্রভাবশালীদের কার্যকলাপ যাতে বাইরে প্রকাশ না পায়, সে জন্য।
তার ভাষ্য, “জামায়াত ও এনসিপি এখন ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াত-বিএনপি লোক বসানো হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষপদে তারা বসে আছে। কিন্তু এই অবস্থা স্থায়ী হবে না। যে মুহূর্তে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হবে, এদের কেউ আর সেই জায়গায় থাকবে না। যেমন ধরুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসিকে আপনি মার্চের পর আর দেখতে পাবেন না। এটাই বাস্তবতা।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি টাঙানোর সাহস তারা কেন পায়? কারণ তারা জানে, এখন কেউ কিছু বলবে না। এটাই তাদের বর্তমান সময়ের ‘ক্ষমতার স্বাদ’। কিন্তু পরবর্তী সরকার আসলে এই সাহস থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, “তিনটি দলই— বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি— কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার স্বাদ নিচ্ছে। প্রশাসনের ভিতরে বসে কাজ করছে, সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু এগুলো দীর্ঘমেয়াদী নয়। এসব সুবিধা কেবল একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে তারা উপভোগ করছে, যা স্থায়ী হবে না।”
মাসুদ কামাল শেষে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এখনো এমন জায়গায় আসেনি যে, তারা জামায়াত বা এনসিপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে। যত বড় পরিকল্পনাই করুক না কেন, ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি এখনো তাদের হাতে নেই, আর হবে না।