জামায়াত একদিকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, অন্যদিকে পিআরের জন্য আন্দোলন করছেন, এগুলো জাতীর সাথে প্রতারণা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
At a BNP council in Lakshmipur, Vice Chairman Azam Khan accused Jamaat of deceiving the nation by fielding 300 candidates while simultaneously launching PR-based movements.

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির সম্মেলনে ভাইস চেয়ারম্যান আযম খান বলেন, জামায়াত একদিকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, অন্যদিকে পিআরের নামে আন্দোলন করছে—এটি জাতির সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়।

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আয়োজিত এক বৃহৎ রাজনৈতিক সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আযম খান কঠোর ভাষায় জামায়াতের রাজনীতিকে প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জামায়াত একদিকে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, অন্যদিকে পিআরের নামে আন্দোলন করছে। তার মতে, এই দ্বিমুখী অবস্থান আসলে জাতির সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে আলেকজান্ডার মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আযম খান বলেন, “তারা গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে বলে ভোট দিলে বেহেশত পাওয়া যাবে। অথচ আমাদের নবী করিম (সাঃ) পর্যন্ত এমন কিছু বলেননি। কারণ বেহেশতের টিকেট দেওয়ার মালিক কেবল আল্লাহ। এরা একদিকে ধর্ম নিয়ে প্রতারণা করছে, আরেকদিকে রাজনীতিতেও প্রতারণা করছে।”

তিনি আরও বলেন, জামায়াতের নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তারা এমন পর্যন্ত বলছে যে, তাদের ভোট না দিলে মৃত্যুর পর জানাজা পড়াবে না। আযম খানের দাবি, “৭-৮ ভাগ মাওলানা জামায়াতের সাথে থাকলেও ৯০ ভাগ মাওলানা বিএনপির সাথে আছেন।”

আযম খান তার বক্তব্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য। শহীদ জিয়া ভিক্ষার ঝুলি থেকে দেশকে বের করে উন্নয়নের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর জানাজায় লাখো মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করেছিলেন জিয়া ছিলেন জাতির হৃদয়ের স্পন্দন।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও কখনো ফ্যাসিবাদের সাথে আপোষ করেননি। একইভাবে তারেক রহমানও আপোষ করেননি বরং গণঅভ্যুত্থানের নায়ক হয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। তিনি দাবি করেন, বিএনপি শেখ হাসিনার উত্তরসূরী নয়, বরং জিয়া পরিবারের উত্তরসূরী। “হাসিনার মত দুর্নীতিতে জড়ালে আমাদেরও একই পরিণতি হবে, তাই দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে”—বলেন আযম খান।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হারুন অর রশিদ, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দীন সাবু এবং যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট হাসিবুর রহমানসহ আরও অনেকে।

আযম খান তার বক্তব্যে স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “৭১ কে অস্বীকার করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। জামায়াত এখন গণঅভ্যুত্থানকে ৭১ এর সাথে তুলনা করছে, কিন্তু ৭১ একবারই এসেছে, দুইবার আসবে না।” তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, জামায়াত ইসলামকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। “নীল নদের পানি যেমন আসলে নীল নয়, তেমনি তাদের ইসলামও প্রকৃত ইসলাম নয়, বরং মওদুদীর ইসলাম।”

বিএনপি জঙ্গীবাদকে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে আযম খান বলেন, “আগামী ৫০ বছর জিয়া পরিবার দেশ পরিচালনা করবে এবং কোটি কোটি মানুষ জিয়া পরিবারের সাথেই থাকবে।”

সম্মেলন শেষে রামগতি উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ডাঃ জামাল উদ্দীনকে সভাপতি ও সিরাজ উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পাশাপাশি রামগতি পৌরসভা বিএনপির নতুন কমিটিও ঘোষণা করা হয় যেখানে সাহেদ আলী পটুকে সভাপতি ও আল আমিন মুর্তজাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মেলনের বক্তব্য শুধু বিএনপির অভ্যন্তরীণ ঐক্যের বার্তাই নয়, বরং জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থানকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কারণ, একদিকে প্রার্থী দিয়ে অন্যদিকে আন্দোলন করার বিষয়টি অনেকের কাছেই সাংঘর্ষিক মনে হয়েছে।

No comments found