জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের নতুন বর্ধিত ও হল কমিটি গঠনের পর থেকেই ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৮ আগস্ট ঘোষিত এই কমিটিতে ত্যাগী ও দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করা নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জায়গা দেওয়া হয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী, মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে বহিষ্কৃত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন বিতর্কিত চরিত্রদের। এই পদোন্নতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানান অনেক নেতাকর্মী।
এই প্রতিবাদের জের ধরে ১৩ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) জারি করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ। রবিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নোটিশ প্রদান করা হয়।
শোকজপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬ জন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৭ জন সদস্য রয়েছেন। যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন— মিজানুর রহমান, মো. হোসাইন আল রাসেদ বাদল, মমিনুর রহমান লাজু, আলাউদ্দিন দেওয়ান, রাজুয়ার হোসাইন ও মো. জোবায়ের হোসাইন। সদস্য হিসেবে শোকজ পেয়েছেন মাহবুবুর রহমান মুরাদ, জাকিরুল ইসলাম, সাদিকুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, মির্জা আবু বকর সিদ্দিক সোহাগ, মাসুদ রানা পাইলট মিস্ট এবং আবেশ আল মুবিন নাফি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাবি শাখার দায়িত্বশীল পদে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কেন তাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না— তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে।
এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই নির্দেশনা জারি করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাস রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে বিতর্কিত এবং দলবদল করা ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে, যা ভবিষ্যতে সংগঠনের ভেতরে বিভক্তি বাড়াতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই শোকজ নোটিশ একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে এটি দলীয় ভেতরের অসন্তোষ দমন করারও একটি কৌশল। তবে, এতে সংগঠনের ভেতরে আস্থার সংকট আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ভেতরে অস্থিরতা ও বিভক্তি নতুন মাত্রা পেয়েছে। অনেকে মনে করছেন, যদি দ্রুত সমাধান না আসে, তাহলে আসন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।