জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)-এর নবনির্বাচিত কমিটির শপথ আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় সিনেট হলে অনুষ্ঠিত হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)-এর নবনির্বাচিত কমিটির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত হবে এই শপথ অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম রশিদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, অনুষদের ডিন, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন।
এবারের নির্বাচনে ফলাফল ছিল অনেকটা চমকপ্রদ। ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু। অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয় পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্র) পদে জয়ী হয়েছেন ফেরদৌস আল হাসান এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্রী) পদে নির্বাচিত হয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এই দুইজনই শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদেও শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আবু ওবায়দা ওসামা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক মো. শাফায়েত মীর, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম এবং নাট্য সম্পাদক হয়েছেন মো. রুহুল ইসলাম। একইভাবে সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) পদে ফারহানা আক্তার লুবনা, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) পদে মো. মাহাদী হাসান এবং তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন—যাদের সবাই শিবির সমর্থিত প্যানেলের সদস্য।
যদিও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান কিরন এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিবুল্লাহ শেখ জিসান। এছাড়া সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস সমর্থিত আহসাব লাবিব।
নারী কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন নাবিলা বিনতে হারুন, ফাবলিহা জাহান ও নুসরাত জাহান ইমা। পুরুষ কার্যকরী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন মো. তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা ও মো. আলী চিশতী। এই কার্যকরী সদস্যরাও মূলত শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সর্বমোট ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জাকসুর নবনির্বাচিত কমিটির অধিকাংশ পদে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীদের দখল দৃশ্যমান। তাদের এই জয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই কমিটির শপথ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিজয়ী প্রার্থীদের পাশাপাশি পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বীরাও আমন্ত্রিত থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নবনির্বাচিত কমিটি শুধু ক্ষমতা ভোগে সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যা সমাধান, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একাডেমিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসে সেশনজট নিরসন, পরিবহন সংকট, আবাসন সমস্যা সমাধান এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তারা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ঘিরে এখন পুরো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিজয়ী প্রার্থীরা তাদের সমর্থক ও শিক্ষার্থীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অপেক্ষা করছেন বৃহস্পতিবারের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য, যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন জাকসুর নতুন নেতৃত্ব।