জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১নং হল ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে ৩ জন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (ছাত্রদল) ২১নং হলের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ৬ সদস্যের এই কমিটির মধ্যে অন্তত ৩ জনের পরিচয় ঘিরে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। জানা গেছে, এরা সবাই একসময় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ছিনতাইয়ের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল।
গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) ছাত্রদল জাবি শাখার আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ও সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিকের স্বাক্ষরে ২১নং হল ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তালিকায় দেখা যায়, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ফিরোজ আহমেদ রিমন, সহসভাপতি পদে আছেন সাইদুর রহমান সীমান্ত এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন ইমরান নাজিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রিমন, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী সীমান্ত এবং পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান— সবাই আগে ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
তদন্তে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ রিমন ২১নং হলের ছাত্রলীগ ব্লকে অবস্থান করতেন এবং ছাত্রলীগের মিছিল ও সভা-সমাবেশে সরাসরি অংশ নিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনের সময়ও তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সেই সময়কার ছবি ও ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সহসভাপতি সাইদুর রহমান সীমান্তও দীর্ঘ সময় ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং থাকতেন ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্লকে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তার প্রতি হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ৫০ ব্যাচের পক্ষ থেকে তাকে আজীবনের জন্য সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ইমরান নাজিজের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের ৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ৯ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ওই বছরের ২০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা চার বহিরাগত শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে ইমরান। পরে তিনি ১০ হাজার টাকা ও তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। ওই সময়ও তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
ছাত্রলীগের সঙ্গে অতীত সম্পৃক্ততা ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে অভিযুক্তদের ছাত্রদলের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ বিষয়ে ছাত্রদল জাবি শাখার সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, আমরা আগে বিষয়টি জানতাম না। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্যদিকে আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর জানান, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। তদন্ত শেষে যদি অভিযোগ সত্য হয়, তবে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহল মনে করছে, এই বিতর্ক ছাত্রদলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ছাত্ররাজনীতিতে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।