ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের ফারুকুল ইসলাম নান্টু, উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিদেশযাত্রার চেষ্টা করে নিঃস্ব হয়ে ফিরে এসেছেন। তার এই দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা মানব পাচার ও প্রতারণার শিকার হওয়ার একটি অত্যন্ত করুণ উদাহরণ।
ফারুকুল ইসলাম নান্টু, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ মিয়ার ছেলে, সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে স্থানীয় দালালের প্ররোচণায় লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার এই স্বপ্ন পরিণত হলো এক দুঃস্বপ্নে। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তিনি এবং তার মতো আরও অনেকে অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন, যা আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের হাতে বিক্রি পর্যন্ত গড়ায়।
লিবিয়ায় প্রবেশের পর তার পাসপোর্ট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোরপূর্বক নিয়ে নেয়া হয়। তার পর থেকে শুরু হয় নির্যাতন। এই নির্যাতনের সময় তার পরিবারের কাছ থেকে আরও ৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। আন্তর্জাতিক চক্রের হাতে ধরা পড়ার পর তিনি ২ মাস ২৪ দিন জেল খেটে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি পান। ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে তিনি দেশে ফেরত আসেন, কিন্তু ফারুকের পরিবার তখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ টাকা হারিয়েছে।
ফারুকুল ইসলাম নান্টুর পরিবার এখন নিঃস্ব। ঋণের বোঝা এবং আয়ের উৎস হারিয়ে তারা বর্তমানে ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচারের আশায় আইনি প্রতিকার খুঁজছে। নাজমা বেগম, নান্টুর পক্ষ থেকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ কোর্টে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের করেন যা বর্তমানে পিবিআই তদন্তাধীন। অভিযুক্ত করা হয়েছে ছোটন আলীর ছেলে হেফজু ওরফে আশিক এবং তার পরিবারকে।
হেফজু ওরফে আশিক অবশ্য দাবি করেন যে, নান্টু লিবিয়া পর্যন্ত যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সেখানে অন্য দালালের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন। তার এ অবস্থার জন্য তিনি নিজেকে দায়ী করেন না।
মানব পাচার একটি গুরুতর অপরাধ এবং এটি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। নান্টুর এই ঘটনা আমাদের সামনে প্রমাণ করে, উন্নত জীবনের হাতছানিতে না ভেসে বরং সচেতনতার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন এবং সমাজের পক্ষ থেকে এমন ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।