ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পোলতাভা শহরে রাশিয়ার চালানো ভয়াবহ ড্রোন হামলায় কমপক্ষে দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি সামরিক নিয়োগ কেন্দ্র এবং বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন। ইউক্রেনের জরুরি সেবা সংস্থা ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পোলতাভায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা মাত্রই শহরের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনের উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছে, হামলায় একটি ভবন সম্পূর্ণ আগুনে পুড়ে যায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ আটকা পড়ে এবং পাশের গাড়িগুলোর বেশিরভাগই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও বলা হয়, একটি সেনা নিয়োগ কেন্দ্রে হামলা হয়েছে এবং সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার হামলার মাত্রা বেড়েছে। একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পুরো ইউক্রেনজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির এক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাশিয়া এবার এমন একটি কারখানাকে টার্গেট করেছে, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্রের নির্দেশিকা ও সংশোধন ব্যবস্থার জন্য ব্যাটারি তৈরি করা হতো।
হামলার ভয়াবহতা শুধু পোলতাভায় সীমাবদ্ধ ছিল না। ওডেসা শহরের এক বহুতল আবাসিক ভবনে রুশ ড্রোনের আঘাতে কমপক্ষে ছয়জন আহত হন, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ কিপার। ধ্বংস হওয়া ভবনের নিচে অনেকে আটকা পড়েছিলেন, যাদের উদ্ধার করতে দমকল ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী রাতভর কাজ করেছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লিপেতস্ক শহরে ইউক্রেনের পাল্টা ড্রোন হামলায় এক বৃদ্ধা নারী নিহত হয়েছেন। শহরটির গভর্নর ইগর আর্টামোনভ জানান, একটি আবাসিক ভবনের ওপর ইউক্রেনীয় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়লে ওই নারী মারা যান এবং আরও দুইজন আহত হন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার মস্কো ও এর আশেপাশে ইউক্রেনের ছোঁড়া মোট ৬৯টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ড্রোন ধ্বংস হয়েছে বেলগোরোড অঞ্চলে, যা ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ড্রোন আক্রমণে মোট ৫২টি ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৪০টি মাঝপথেই ধ্বংস করা হয়।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে কিনা—তা নিয়ে কিয়েভে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, সহায়তা না পেলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে, যা ভবিষ্যতে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়াবে।
ড্রোন যুদ্ধ এখন ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘর্ষের মূল ফ্রন্টে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনের হামলা ও পাল্টা হামলায় শুধু সামরিক নয়, সাধারণ নাগরিকরাও চরম ঝুঁকির মধ্যে। যুদ্ধ বন্ধ না হলে, আগামী দিনগুলোতে এই সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে—এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে সাম্প্রতিক সব তথ্য।
		
				
			


















