রাজধানীতে এক আলোচনায় এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সতর্ক করে বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে তারেক রহমানকে বিদেশে অনলাইন রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে বিদেশে বসে অনলাইনের সীমিত রাজনীতির মধ্যেই আটকে থাকতে হবে তারেক রহমানকে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, আসন্ন নির্বাচন এবং দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “লন্ডনে সিজদা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ওহি এনেছেন। যদি নির্বাচন হয়, তবে আগে গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। দেশের বর্তমান সংকট সমাধানের একমাত্র পথ এটাই।” তিনি উল্লেখ করেন, এনসিপি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য মাঠে নেমেছে এবং তারা শুধু ক্ষমতার লোভে নয়, বরং জনগণের লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে চায়।
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, দলের অনেকের মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকলেও, এনসিপি তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার চেয়ে জনগণের দাবি-দাওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেইসাথে তিনি ঘোষণা দেন, “যদি আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, আমি আর কোনোদিন জনগণের সামনে আসব না।” তার এই বক্তব্য উপস্থিত সবার মধ্যে আলোচনার জন্ম দেয়।
পাটওয়ারী সমালোচনার সুরে বলেন, রাজনৈতিক দল বাদ দিয়েই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র করা উচিত ছিল। তিনি দাবি করেন, দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ সংস্কারের পক্ষে অবস্থান করছে। এই সংস্কারের সুযোগ যদি হাতছাড়া হয়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চয়তায় পড়বে।
আলোচনা সভায় ভারতকেও ইঙ্গিত করে তিনি মন্তব্য করেন, “ভারত জাতীয়তাবাদী ব্যানারের আড়ালে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
রাজনীতির অঙ্গনে তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে এমন সরাসরি বক্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একদিকে বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে এনসিপির মতো দলগুলো নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এই মন্তব্য শুধু তারেক রহমানের প্রতি সতর্কতা নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংস্কারপন্থী শক্তির বার্তাও বহন করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি কি নতুন প্রজন্মের চাহিদা ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে, নাকি বিদেশ থেকে অনলাইন রাজনীতির মাধ্যমে সীমিত ভূমিকার মধ্যেই আটকে থাকবে?
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গন এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে যেকোনো ভুল পদক্ষেপ দলগুলোর জন্য মারাত্মক হতে পারে। আর তাই, পাটওয়ারীর মতো নেতাদের বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে যে, ভবিষ্যতের রাজনীতি কোন পথে এগোবে।