গাজার আল-আওদা হাসপাতালের পাশে ভয়াবহ ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারালেন পাঁচজন সাংবাদিক। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমে। আল-কুদস টুডে চ্যানেলের এই সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
আলজাজিরার প্রতিবেদক আনাস আল-শরিফ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-আওদা হাসপাতালের সামনে ওই সাংবাদিকরা সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ ইসরায়েলি বিমান থেকে তাদের গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে গাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু ঘটে।
প্রেস লেখা গাড়িতেই হামলা!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি সাদা রঙের গাড়ির পেছনে বড় অক্ষরে লেখা ছিল ‘প্রেস’। এটি স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, তারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন ফাদি হাসসুনা, ইব্রাহিম আল-শেখ আলী, মোহাম্মদ আল-লাদাহ, ফয়সাল আবু আল-কুমসান এবং আয়মান আল-জাদি।
স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন নিহত সাংবাদিক
আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে আয়মান আল-জাদি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। তার স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এটি ছিল তাদের প্রথম সন্তান। কিন্তু সেই সন্তান জন্মের আগেই বাবাকে হারাল।
ইসরায়েলের নীরবতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে আলজাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও করতে পারেননি।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক। তারা জানিয়েছে, হামলার পর বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায় এবং নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে।
সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা
সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের এই ধরনের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৪১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিডিয়ার ওপর এমন বর্বরতার জন্য ইসরায়েলকে দায়বদ্ধ করার আহ্বান জানানো হলেও ইসরায়েল এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীন মিডিয়ার অস্তিত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা ও ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলা নতুন সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্ববাসীর কাছে প্রশ্ন:
সাংবাদিকদের হত্যার এই স্রোত কবে থামবে? মিডিয়ার ওপর এমন আক্রমণের পেছনে দায়ী পক্ষকে কবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে
Nenhum comentário encontrado