ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রতিবেশীর কাছ থেকে জমি কিনে ৩৫ বছর পর বিক্রেতার পরিবার কর্তৃক হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন জমি গ্রহীতারা। ঘটনাটি উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া গ্রামের।
জানা গেছে, মৃত মনির উদ্দিনের চার ছেলে রুহুল আমীন, ইউসুফ আলী, শামছুল হক ও লোকমান মিয়া ১৯৯০ সালে প্রতিবেশী মৃত ছমির উদ্দিন মীরের ছেলে আব্দুর রহিমের কাছ থেকে ৩০ শতক জমি এবং ১৯৯৭ সালে আরও সাড়ে ১৩ শতক জমি ক্রয় করেন। পরবর্তী সময় থেকে তারা উক্ত জমি শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন।
কিন্তু ২০১৫ সালে হঠাৎ আব্দুর রহিম দাবি করেন, বিক্রিত জমির বাইরে আরও জমি তার মালিকানাধীন রয়েছে এবং তার অংশ ভুলক্রমে গ্রহীতারা দখলে রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সালিশ বৈঠক হয় এবং জমি মাপজোক করেও বিক্রিত জমির বাইরে এক শতক জমিও পাওয়া যায়নি।
তারপরও ২০১৬ সালে আব্দুর রহিম জমির তথ্য গোপন রেখে আদালতে মামলা করেন এবং ২০১৭ সালে আদালত থেকে একতরফা ডিগ্রী আদায় করে নেন। গ্রহীতাগণ মামলার বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সানি মামলা দায়ের করেন। আদালত একতরফা ডিগ্রী স্থগিত করেন এবং দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২১ সালে গ্রহীতাদের পক্ষে রায় প্রদান করেন। পরে আব্দুর রহিম পুররায় আপিল করলে ২০২৫ সালে জেলা জজ আদালত সেটি খারিজ করে দেন। এরমধ্যে আব্দুর রহিম মারা গেলে তার ছেলেরা আবারো মামলাটি শুনানির আবেদন করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
এ অবস্থায় দাতার পরিবার জমি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। গ্রহীতা রুহুল আমীনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের ২০মে আদালতের রায় অমান্য করে আমাদের ক্রয়কৃত জমিটি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে ২৬মে নিজের বাড়িতে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই দিন রাতে আব্দুর রহিমের ছেলে মাসুদ, রোকন ও রিপন আমার জমির ভাগিদার নূরুল ইসলাম (৪৫) কে একা পেয়ে মাথায় গুরুত্বর আঘাত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ করে।
ভুক্তভোগী রুহুল আমীন বলেন, “উচিত দামে জমি কিনেও বার্ধক্যে এসে আমি ও আমার পরিবার মানসিক, শারীরিক, আর্থিক এবং সামাজিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।”
অপরদিকে, দাতার ছেলে মাসুদ বলেন, “জমিটি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। তারা কাগজপত্র নিয়ে পরে কথা বলবে বলে জানান।” তবে এরপর থেকে তিনি আর কোন যোগাযোগ করেননি।
স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে আবারো উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভুক্তভোগীরা এখন দ্রুত আইনি প্রতিকার এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, এটি মূলত জমি সংক্রান্ত বিরোধ। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। জমির বিষয়টা আদালত দেখবেন। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।