যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর পুরো বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিয়ে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, হামলার কারণে সেসব স্থাপনায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা শুধু ইরান নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এক বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—ইরানের কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়েনি।
IAEA-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, হামলার পরও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বাইরে কোনো অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয়তা সনাক্ত হয়নি। পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। অতিরিক্ত তথ্য এলে আরও বিশ্লেষণ দেওয়া হবে।”
বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয় IAEA-এর এ বিবৃতিতে। কারণ ইরান শুধু মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র নয়, তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
শুধু IAEA-ই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ কুয়েত-ও এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছে। কুয়েতি ন্যাশনাল গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মার্কিন হামলার পর তারা বিশেষভাবে নজরদারি শুরু করে আকাশসীমা ও আঞ্চলিক জলসীমায়। তারা বলে, “আমাদের পারমাণবিক প্রতিরক্ষা কেন্দ্র কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি শনাক্ত করেনি। এখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।”
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন একটি নিশ্চয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তেজস্ক্রিয়তা যদি ছড়িয়ে পড়ত, তবে তা কেবল ইরান নয় বরং কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতারসহ গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলকেই স্বাস্থ্য ও পরিবেশগতভাবে হুমকির মুখে ফেলত।
বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা এই হামলার পরে জরুরি বৈঠকের আহ্বান করেছিল। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, হামলা যদি পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি করে, তাহলে তার প্রভাব হবে বহু দশকব্যাপী। তবে IAEA এবং কুয়েতের রিপোর্ট এই মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই হামলা ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার ইঙ্গিত বহন করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উচিত এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে তৎপর হওয়া।
ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বে অনেক ধরনের মতপার্থক্য থাকলেও, বাস্তবতা হলো—এমন স্থাপনাগুলোতে সামান্য ত্রুটি বা দুর্ঘটনাও ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই IAEA এবং কুয়েতের কাছ থেকে পাওয়া এই তথ্য এখন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর চেয়েও বেশি জরুরি ভবিষ্যতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সতর্কতা এখন সময়ের দাবি।