মাহফুজুল হক পিয়াস, ইবি:
জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শুরু হওয়া প্রথম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ না নেওয়ার’ দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই পরীক্ষায় ছাত্রলীগ-সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে ছাত্রদল। পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ‘ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি। ছাত্রদলের বিক্ষোভের কারণে পরীক্ষার সময়সূচিতে বিলম্ব ঘটে।
এদিন সকাল ১০টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নিয়োগ বাতিল ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার দাবিতে ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবনের ডিন অফিসে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। পরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসে তারা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এস. এম. সুইটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রায় ১০টা ৪০ মিনিটে বৈঠক শেষে ছাত্রনেতারা বেরিয়ে আসেন এবং বিক্ষোভ পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে মিছিল করেন ছাত্রদল কর্মীরা। মিছিলে স্লোগান দেওয়া হয়- “ফ্যাসিস্টদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না”, “ফ্যাসিস্টযুক্ত নিয়োগ বোর্ড, মানি না মানবো না”, “ছাত্রলীগ থাকবে যেখানে, জুলাই হবে সেখানে”, “নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য, মানি না মানবো না”, “অবৈধ নিয়োগ, মানি না মানবো না।”
বিক্ষোভ পরবর্তী ছাত্রদল আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “আমাদের দাবি খুব স্পষ্ট—বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু গতকাল ফোকলোর বিভাগে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের প্রার্থী অংশ নিয়েছে এবং টিকেও গেছে—যা প্রশাসনের নিরপেক্ষতার ব্যর্থতা। আমরা চাই, যেখানে ফ্যাসিস্টদের সম্পৃক্ততা আছে, সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের ‘ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই অভিযুক্ত এবং শোকজপ্রাপ্ত। তার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও তাকে রেখে বোর্ড পরিচালনা করা হচ্ছে-যা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। আমরা দাবি জানিয়েছি এই বোর্ড বাতিল করে নতুন বোর্ড গঠন করা হোক।”
ইবি ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, মেধার ভিত্তিতেই যেন শিক্ষক নিয়োগ হয়-এটাই আমাদের দাবি। যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে আমরা আমাদের মতো করে প্রতিক্রিয়া জানাবো।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এস. এম. সুইট বলেন, “আমরা চাই শিক্ষক সংকট দ্রুত দূর হোক, তবে যেন জুলাই গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত বা ফ্যাসিস্ট সংশ্লিষ্ট কেউ নিয়োগ না পায়। যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিরাই শিক্ষক হবেন, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।”
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম বলেন, “বিগত ১৬-১৭ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্নমত দমন করে একচেটিয়া নিয়োগ দিয়েছে। তাই জুলাই পরবর্তী সময়ে আমরা চাই, কোনোভাবেই ছাত্রলীগ বা ফ্যাসিস্টদের সহযোগী কেউ যেন শিক্ষক নিয়োগে অংশ নিতে না পারে। যদি নেয়, আমরা সেই নিয়োগ মেনে নেব না এবং আন্দোলনে নামবো।”
অন্যদিকে, এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ছাত্র হিসেবে এখানে যারা মেধাভিত্তিকভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, তারাই এখানে পরীক্ষা দিয়েছে। এখানে তো ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো দলের বিষয় নয়-যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কেউ জানে না। পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ তো সবার জন্য উন্মুক্ত।"
তিনি আরও বলেন, "এবারের শিক্ষক নিয়োগ, ইনশাআল্লাহ, অতীতের যেসব বদনাম ছিল-যে মেধাভিত্তিতে হয়নি, যোগ্যতার ঘাটতি ছিল-সেই বদনাম এবার ঘুচবে। আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে বদ্ধপরিকর।"