সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিক বলেছেন, হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি চরম ভণ্ডামি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, হলে রাজনীতি না থাকলে ডাকসু নির্বাচন কিভাবে হবে?
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকার অনুমতি দিয়ে হলে তা নিষিদ্ধ করার দাবি আসলে এক ধরনের চরম ভণ্ডামি এবং বাস্তবতাবিবর্জিত চিন্তাভাবনা।
শনিবার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকবে কিন্তু হলে থাকতে পারবে না, কমিটি দেওয়া যাবে না — এটি চরম ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।” তাঁর ভাষায়, ছাত্র রাজনীতি কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা হলে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হবে।
মারুফ মল্লিক আরও বলেন, “যদি হলে রাজনীতি না থাকে, তাহলে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন করা সম্ভব হবে কীভাবে? হল রাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়, প্রার্থী নির্বাচন করে এবং তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। এটি বাদ দিলে ছাত্র সংসদ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে যে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে মিছিল বা প্রচারণা চলছে, তাদের অনেকেই আসলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) বা জামায়াত-শিবিরের কর্মী। তিনি মনে করেন, “গুপ্ত রাজনীতি করতে করতে তারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করার ক্ষমতা ও সাহস হারিয়ে ফেলেছে। এই পরিস্থিতি গণতন্ত্র ও শিক্ষাঙ্গনের জন্য মোটেও ভালো নয়।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে মারুফ মল্লিক দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষাঙ্গনের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণ করা উচিত, কারণ এটি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলে। হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে কেবল শিক্ষার্থী রাজনীতিই নয়, বরং তাদের সামাজিক ও নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়ে পড়বে।
অনেকে হলে রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা বললেও মারুফ মল্লিক মনে করেন, সমস্যার সমাধান নিষিদ্ধকরণ নয়, বরং সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, “যে কোনো অশান্তি বা অপব্যবহারের সমাধান আইন ও নীতি মেনে হওয়া উচিত, নিষিদ্ধ করে নয়।”
তার এই বক্তব্য ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সমর্থকরা মনে করছেন, হলে রাজনীতি চালু থাকলে শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে, আর বিরোধীরা বলছেন, হলে রাজনীতি সহিংসতা ও দলীয় প্রভাব বাড়ায়। তবে মারুফ মল্লিকের বক্তব্যে একটি বিষয় স্পষ্ট — তিনি ছাত্র রাজনীতির গণতান্ত্রিক চর্চাকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখছেন এবং নিষিদ্ধের দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন।