ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে বামপন্থী রাজনীতি ছাড়া অন্যান্য সব ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের রাজনীতি নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য সচিব উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি কবি সুফিয়া কামাল হলে বাম রাজনীতি ছাড়া অন্য সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর দেওয়া এক লিখিত দরখাস্তে তিনি এ প্রস্তাব তুলে ধরেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ ঘটনার পেছনে প্রেক্ষাপট রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই ঢাবির সব আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল জুলাই অভ্যুত্থানের পর। প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তের পর থেকে হলে রাজনীতি পুনরায় চালু হবে কি না—এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর মধ্যেই শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে ছাত্রদল আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে, যা অনেক শিক্ষার্থীকে বিস্মিত করে তোলে। কারণ, এই প্রথম সবগুলো হলে একসঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন কমিটি গঠন করল।
উমামা ফাতেমা তার দরখাস্তে উল্লেখ করেন, গত বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির ও বাগছাসসহ চারটি সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, গত এক বছরে সেই চুক্তি কার্যকর থাকলেও কিছু সংগঠন গোপনে কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু এবার ছাত্রদল প্রকাশ্যে সাত সদস্যবিশিষ্ট হল কমিটি ঘোষণা করেছে, যা তার মতে ওই চুক্তি ভঙ্গের সামিল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা।
দরখাস্তের পাশাপাশি উমামা ফাতেমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি ছাত্রদলকে শুক্রবার রাতের মধ্যে কমিটি স্থগিত করার আল্টিমেটাম দেন। তবে সমালোচকদের অভিযোগ—তিনি কেবল চারটি সংগঠনের নাম উল্লেখ করে নিষিদ্ধের দাবি করলেও হলে সক্রিয় বামপন্থী সংগঠনগুলোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। অথচ সুফিয়া কামাল হলে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোরও অবস্থান রয়েছে এবং কিছু হলে তাদের কমিটিও বিদ্যমান।
উল্লেখযোগ্য যে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর হলে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণা করে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন। এ বছরের ২৬ মে তারা সুফিয়া কামাল হলে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে। সে সময় তেমন কোনো সমালোচনা হয়নি বা প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।
এ নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (এনসিপি)-র দক্ষিণাঞ্চল সংগঠক হামজা মাহবুব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে লেখেন, “উমামা ফাতেমা হলে বাম রাজনীতি ছাড়া আর কোনো রাজনীতি চান না—এটা কেমন কথা? মানে হিপোক্রেসি এট ইট’স পিক! হল এবং একাডেমিক এলাকায় রাজনীতির বিরুদ্ধে সবাই, আর উনি বাম রাজনীতি ব্যতীত বাকি সব রাজনীতির বিরুদ্ধে।”
এ ঘটনাকে ঘিরে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ আরও তীব্র হচ্ছে। একদল শিক্ষার্থী মনে করছেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলকে হলে প্রবেশাধিকার দেওয়া উচিত নয়, আবার অন্যরা বলছেন, নির্দিষ্ট মতাদর্শের রাজনীতি চালু রেখে অন্যদের নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। ফলে সুফিয়া কামাল হলের এই রাজনৈতিক বিতর্ক শিগগিরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে।