চট্টগ্রামে হেফাজতের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর জামায়াতবিরোধী মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গত ৫ আগস্ট হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তার সরাসরি আক্রমণাত্মক ভাষায় দেওয়া মন্তব্য ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটি।
৬ আগস্ট একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামকে ‘ভণ্ড ইসলামী পার্টি’ এবং ‘কাদিয়ানিদের চেয়েও নিকৃষ্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ৭ আগস্ট একটি লিখিত বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিবৃতিটি দিয়েছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “হেফাজত আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া এবং অশোভন। এটি নিঃসন্দেহে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক। বর্তমানে দেশের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যখন ঐক্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তখন এই ধরনের বিভেদমূলক মন্তব্য শুধুমাত্র ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র হিসেবেই বিবেচিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের বক্তব্য ইসলামী মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী। এমন মন্তব্য ইসলামবিরোধী শক্তি ও দেশের ষড়যন্ত্রকারীদের হাতকে শক্তিশালী করবে। এটি ব্যক্তি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর মতো একজন প্রবীণ আলেমের কাছ থেকে আসায় জাতি হতাশ।”
জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট করে জানায়, ‘মওদূদীর ইসলাম’ নামে কোনো আলাদা ইসলাম নেই। কোরআন ও সুন্নাহ-ই ইসলামের একমাত্র উৎস। দলটি সেই মৌলিক ইসলামের অনুসারী। “মওদূদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়”—এমন বক্তব্য একেবারেই ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমন মনগড়া বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করতে পারে বলে মন্তব্য করেন জুবায়ের।
বিবৃতিতে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আরও বলেন, “দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা ও সংলাপ জরুরি। অথচ মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সেই চর্চার পরিপন্থী মন্তব্য করেছেন, যা তার দায়িত্বশীলতার সঙ্গে যায় না। এমন মন্তব্যে ইসলামী সমাজে বিভক্তি তৈরি হতে পারে, যা ইসলামপন্থীদের সংগ্রামের পথকে দুর্বল করে দেবে।”
জামায়াত নেতার ভাষায়, “আমরা তার এই বক্তব্যে বিস্মিত ও হতাশ। আমরা আশা করি তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের ভিত্তিহীন, বিদ্বেষমূলক ও উসকানিমূলক মন্তব্য থেকে বিরত থাকবেন।”
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই নানা মতভেদ বিদ্যমান। তবে হেফাজত ও জামায়াতের মতো প্রভাবশালী দুটি দলের মধ্যে এই ধরনের প্রকাশ্য বিবাদ ইসলামী ঐক্যকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে যখন সরকারবিরোধী ঐক্য, ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা সামনে চলে এসেছে, তখন এমন বিরোধ রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য অশনিসঙ্কেত বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।