সাবেক এনসিপি নেত্রী নীলা ইস্রাফিল অভিযোগ করেছেন, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি অবস্থায় তার স্বামীর স্থানে অন্যের নাম বসানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। তিনি ঘটনাকে জালিয়াতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিজের অজান্তে হাসপাতালের নথিতে স্বামীর নাম পরিবর্তনের অভিযোগ তুলেছেন সাবেক জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেত্রী নীলা ইস্রাফিল। তিনি এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত জালিয়াতি’ এবং ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (৯ আগস্ট) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশিত এক দীর্ঘ পোস্টে নীলা ইস্রাফিল হাসপাতালের রোগী ভর্তি ফরমের একটি কপিও সংযুক্ত করেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময় তার ব্যক্তিগত নাম, পরিচয়, কিংবা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না।
নীলার অভিযোগ, ঠিক সেই অসহায় মুহূর্তে সারোয়ার তুষার নামে এক ব্যক্তি তার স্বামীর নামের স্থানে নিজের নাম বসিয়ে দেন। তার ভাষায়, “এটা কোনো ভুল নয়, বরং আইনগতভাবে এটি একটি সুপরিকল্পিত জালিয়াতি। আমার অনুমতি ছাড়া আমার বৈবাহিক তথ্য পরিবর্তন করার মাধ্যমে আমার সামাজিক মর্যাদা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং আইনি নিরাপত্তাকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত নথিতে মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং তা ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় কারও ব্যক্তিগত তথ্য অনুমতি ছাড়া পরিবর্তন করাও আইনের লঙ্ঘন। নীলার মতে, এই ঘটনা শুধুমাত্র তার সামাজিক সুনাম নষ্ট করতে পারে না, বরং ভবিষ্যতে এটি তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবহার হতে পারে।
এছাড়া তিনি জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সনদ (UDHR)-এর ধারা ৩, ৫, ১২ ও ২২-এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই ঘটনায় তার ব্যক্তিগত মর্যাদা, গোপনীয়তা এবং আইনি নিরাপত্তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। “আমার অনুমতি ছাড়া পারিবারিক পরিচয় বিকৃত করা মানে শুধু আমাকে অপমান করা নয়, বরং এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা,” বলেন নীলা।
তিনি আরও বলেন, এই অভিযোগ কেবল তার ব্যক্তিগত লড়াই নয়, বরং এটি প্রতিটি মানুষের নিজের পরিচয়, মর্যাদা এবং অধিকারের জন্য সংগ্রাম। অসুস্থ ও অক্ষম অবস্থায় কোনো রোগীর ব্যক্তিগত নথিতে তথ্য বিকৃত করা একটি গুরুতর অপরাধ এবং এটি অন্য যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে।
ঘটনার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে নীলা অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানান। তিনি দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, হাসপাতালের রেকর্ডে তার প্রকৃত তথ্য পুনঃস্থাপন এবং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগের আহ্বান জানান।
নীলার দাবি, রোগীর অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য পরিবর্তন করে, তাদের বিরুদ্ধে উদাহরণযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এ ধরনের অপরাধ বাড়তে থাকবে। তিনি সমাজের সকলকে সতর্ক থেকে মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।