জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রমাণ মেলেনি। তাই শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের পাঁচ জন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে আনা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তদন্ত করে কোনো ধরনের প্রমাণ পায়নি। ফলে শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেছে দলটি। এতে করে আলোচিত ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক জটিলতার অবসান ঘটল।
শনিবার (১৬ আগস্ট) এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহর কাছে পৃথক পৃথক কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সফরের সময় দলীয় কর্মসূচির বাইরে গিয়ে তারা কিছু কার্যক্রমে যুক্ত হন কিনা—সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। এ কারণেই তাদের কাছে লিখিত জবাব চাওয়া হয়।
পরে সংশ্লিষ্ট পাঁচ নেতা দলীয় দপ্তরের মাধ্যমে আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন বরাবর নিজেদের ব্যাখ্যা দাখিল করেন। তাদের দেওয়া জবাব বিশ্লেষণ করে নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযোগের ঘটনায় কোনো ধরনের দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, শোকজের জবাব সন্তোষজনক হওয়ায় নোটিশগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এনসিপি একটি বড় সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ, শৃঙ্খলাজনিত অভিযোগে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের শোকজের বিষয়টি দলের ভেতরে ও বাইরে নানা আলোচনা সৃষ্টি করেছিল। বিশেষত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্তে আসায় বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।
এদিকে, শোকজ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অভিযুক্ত নেতারা। তারা বলেছেন, দলের প্রতি আনুগত্য ও শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে তারা সবসময়ই সচেতন। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়ায় তারা আরও শক্তি ও উদ্যম নিয়ে দলীয় কাজে সম্পৃক্ত হবেন।
দলীয় সূত্র বলছে, এনসিপি বর্তমানে সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারে মনোযোগী। নতুন করে কোনো বিভ্রান্তি বা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব না বাড়িয়ে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে চায়। শোকজ প্রত্যাহার সেই কৌশলেরই একটি অংশ।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকেই বলছেন, অভ্যন্তরীণ ঐক্য ছাড়া সামনে রাজনৈতিক অঙ্গনে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই শৃঙ্খলাজনিত বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা দলীয় ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সংকেত।
ফলে বলা যায়, এনসিপি আপাতত বিতর্ক এড়িয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো এবং জনসম্পৃক্ত রাজনীতির পথে মনোনিবেশ করছে।