দুর্নীতি ও প্রতারণার মামলার জেরেই কি শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলকে ছুটিতে পাঠানো হলো? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদ থেকে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ১১ জুলাই, শুক্রবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরস আধানম গেব্রিয়েসুস একটি অভ্যন্তরীণ ইমেইলের মাধ্যমে সংস্থার সকল কর্মীকে জানিয়েছেন।
সায়মা ওয়াজেদ, যিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে হিসেবে পরিচিত, তাকে ঘিরে গত কয়েক মাসে উঠে এসেছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ। বিশেষ করে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করার পর থেকেই তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, সায়মা ওয়াজেদ শিক্ষাগত যোগ্যতা, পদমর্যাদা ও বিদেশি অনুদানের অপব্যবহার সংক্রান্ত নানা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।
ডব্লিউএইচও’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতুলের অনুপস্থিতিতে সহকারী মহাপরিচালক ডা. ক্যাথারিনা বোহমে ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি ১৫ জুলাই, মঙ্গলবার নয়াদিল্লির সিয়ারো অফিসে যোগ দেবেন।
সায়মা ওয়াজেদ চলতি বছরের জানুয়ারিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু শুরু থেকেই তার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ছিল প্রবল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়েই পুতুল এই পদে বসেছেন। প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নিয়োগপত্র পাওয়া একজন কর্মকর্তার ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক দায়িত্ব কতটা গ্রহণযোগ্য — এমন প্রশ্নও তুলেছে অনেকে।
দুদকের মামলার চার্জশিট অনুযায়ী, সায়মা ওয়াজেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অনারারি পদে থাকার মিথ্যা দাবি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। এর ফলে মামলায় বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারা (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) ও ৪৭১ ধারা (জাল দলিল ব্যবহার) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, তিনি শুচনা ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান হিসেবে ২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা) বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অনিয়মিতভাবে গ্রহণ করেন। এসব অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার প্রমাণিত হতে পারে বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
এই মামলাগুলোর কারণে বর্তমানে তিনি কার্যত আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেকোনো দেশে সফর করা তার পক্ষে এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে, যা কার্যকর হওয়ার আশঙ্কায় বিদেশ সফরের ঝুঁকি নিতে পারছেন না তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে এমন বিতর্কিত নিয়োগ ও পরবর্তীতে দুর্নীতির মামলায় সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এটিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের বিশ্বপরিসরে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টার ব্যর্থ পরিণতি হিসেবে দেখছেন।