হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরাতে দিল্লিতে ৫ পরিকল্পনা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
In a secret meeting in New Delhi, Sheikh Hasina and S. Alam Group chairman Saiful Alam Masud finalized a five-point conspiracy plan to destabilize Bangladesh and return Awami League to power, backed b..

দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও এস আলম গ্রুপ চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের গোপন বৈঠকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় আনার নীলনকশা প্রণয়ন হয়েছে। কোটি কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে পাঁচ দফা ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির শীর্ষ পর্যায়ের বহু নেতা দেশ ছাড়েন। যদিও বিদেশে থেকেও শেখ হাসিনা এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ক্ষমতায় ফেরার নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের ভেতরে ও বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেই চলছে এই রাজনৈতিক নীলনকশা।

সম্প্রতি দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। বৈঠকে আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসাতে কয়েকটি কৌশল নির্ধারণ করা হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ সময় মাসুদ শেখ হাসিনাকে ২৫০০ কোটি টাকা দেন এবং আরও ২০০০ কোটি টাকার আশ্বাস দেন। টাকার বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক লবিং, নাশকতামূলক কার্যক্রম ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।

সূত্র জানায়, সাইফুল আলম মাসুদ উমরাহ পালনের অজুহাতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন, তবে আসল উদ্দেশ্য ছিল পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক। মক্কার ফেয়ারমন্ট হোটেলে বসে তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয়। এ সময় তিনি বিদেশে পাচার করা অর্থ দিয়ে মক্কায় একটি বিলাসবহুল হোটেল কেনার জন্যও একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন।

এরপর ৪ আগস্ট তিনি মদিনায় গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। দুই দিন সেখানে অবস্থানের পর ৬ আগস্ট দুবাই যান এবং সেখান থেকে বিশেষ ফ্লাইটে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছান। দিল্লিতে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তাদের সন্তান এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। তারা ওঠেন দিল্লির পাঁচ তারকা হোটেল দি ওবেরেই-তে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দিল্লি সফরে মাসুদের সঙ্গে দেখা করেন সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বৈঠকে তারা দেশ অস্থিতিশীল করার নানা ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা করেন।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপন বৈঠক। ৮ আগস্ট দুপুরে নিরাপত্তার জন্য বারবার গাড়ি পরিবর্তন করে মাসুদকে নিয়ে যাওয়া হয় লুটিয়েন্স বাংলো জোনে অবস্থিত শেখ হাসিনার বাসভবনে। সেখানে দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত তাদের মধ্যে বৈঠক চলে।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এ সময় ভারতের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা মাসুদের কাছে ৪৫০০ কোটি টাকা চান, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি ও আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোর কৌশলে ব্যয় হবে।

এই টাকার ব্যয়ের জন্য পাঁচটি মূল পরিকল্পনা করা হয়—
১. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবি করা এবং প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকদের ম্যানেজ করা।
২. নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশজুড়ে নাশকতা চালিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপের মুখে ফেলা।
৩. সরকারি আমলা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অর্থের বিনিময়ে কিনে নেওয়া।
৪. আওয়ামী নেতাকর্মীদের জামিন ও আইনি সহায়তায় অর্থ ব্যয় করা।
৫. এস আলম গ্রুপের শ্রমিকদের ব্যবহার করে দেশজুড়ে আন্দোলন সংগঠিত করা।

এই অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির দায়িত্বে আছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার এই বৈঠক ও কোটি কোটি টাকার লেনদেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের ভেতর ও বাইরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

No comments found