close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

হাসিনাকে কেন ফেরত পাঠানো হচ্ছে না, মোদিকে প্রশ্ন আসাদউদ্দিন ওয়েইসির..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
AIMIM chief Asaduddin Owaisi has questioned PM Modi, asking why former Bangladesh PM Sheikh Hasina is not being deported if India truly plans to send back illegal Bangladeshis.

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্য করে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি প্রশ্ন তুলেছেন—যদি অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়, তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন ফেরত পাঠানো হচ্ছে না?

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে—যদি সত্যিই অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর নীতি কার্যকর করতে চান, তবে প্রথমেই কেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না?

ভারতের খ্যাতনামা ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আয়োজিত ‘আইডিয়া এক্সচেঞ্জ’ অনুষ্ঠানে ওয়েইসি বলেন, “আমরা কেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের দেশে জায়গা দিচ্ছি? তিনি তো বাংলাদেশি, তাই না? তাহলে তাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না কেন?”

ওয়েইসি অভিযোগ করেন, ভারত সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ভিন্ন মানদণ্ডে কাজ করছে। তিনি বলেন, “ভারতে এক বাংলাদেশিকে রাখা হয়েছে, যিনি বারবার বক্তৃতা দিয়ে বিভ্রান্তি ও সমস্যা তৈরি করছেন। অথচ মালদা ও মুর্শিদাবাদের দরিদ্র বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের বিমানযোগে পুনে থেকে কলকাতায় এনে সীমান্তবর্তী নো-ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ভারতে যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন তাদের কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশি ধরা হবে? ওয়েইসি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে কেউ যদি বাংলায় কথা বলে, তাহলে কি সে বাংলাদেশি হয়ে যাবে? এই মানসিকতা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশে বিদেশাতঙ্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

শুধু তাই নয়, আসাদউদ্দিন ওয়েইসি ভারতের ভোটার তালিকার অনিয়মকেও কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় সন্দেহজনক মনে হওয়া অনেক মানুষকে নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অনুযায়ী যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় মুসলিম ভোটারদের নামই সবচেয়ে বেশি কেটে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট নিয়েও ওয়েইসি ভারত সরকারের নীরবতাকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তিনি গাজার পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “গাজায় যে গণহত্যা চলছে, সে বিষয়ে মোদি সরকার কোনো অবস্থান নিচ্ছে না। বরং তারা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।”

তিনি যোগ করেন, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো এখন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। ২০১৪ সালের পর থেকে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। ওয়েইসির মতে, ভয়ের কারণে বিরোধীদলগুলোও চুপ রয়েছে, অথচ বাস্তবে এর ফলে সংখ্যালঘুরা আরও বেশি বঞ্চিত ও ভীত হয়ে পড়ছে।

ওয়েইসির এই বক্তব্য দেশজুড়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে তার মন্তব্যে ভারতীয় রাজনীতির অন্দরে আলোচনার ঝড় বইছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ওয়েইসির এই প্রশ্ন সরাসরি বিজেপি সরকারকে চাপের মুখে ফেলতে পারে।

এমন এক সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন, যখন ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ইস্যুতে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, দেশ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু ওয়েইসির প্রশ্নে এখন নতুন করে বিতর্ক জেগেছে—যদি সত্যিই এই নীতি কার্যকর হয়, তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন ব্যতিক্রম করা হচ্ছে?

ওয়েইসির বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক সমালোচনা নয়, বরং এটি এখন জনমতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার বক্তব্য ঘিরে ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকে তার মন্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

পরিস্থিতি যেভাবেই হোক, ওয়েইসির এই মন্তব্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক রাজনীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিজেপি সরকার এ বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানায় এবং শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে ওয়েইসির এই কঠিন প্রশ্নে কীভাবে জবাব দেয়।

No comments found