ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ একের পর এক হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আবারো বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন অভিযোগ করেছেন, এ প্রস্তাবের বিরোধিতা এবং ভেটো দেওয়ার পর থেকেই ছাত্রলীগ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে এবং ধারাবাহিকভাবে হামলা চালায়।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ অভিযোগ প্রকাশ করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ডাকসুর একটি বৈঠকে শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব ওঠে। বৈঠকের আগেই ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, তারা এ প্রস্তাব সমর্থন করবেন না। তাদের যুক্তি ছিল, ডাকসু একটি ঐতিহাসিক ও স্বতন্ত্র সংগঠন, এখানে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে আজীবন সদস্য করা হলে ছাত্র সমাজের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে।
পরে বৈঠকে উপস্থিত হন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। বৈঠকে তারা স্পষ্টভাবে শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবে ভেটো দেন। এ সিদ্ধান্তকে শেখ হাসিনার প্রতি ‘অসম্মান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনের দাবি, ভেটো দেওয়ার পরপরই ছাত্রলীগ তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে হামলার পথ বেছে নেয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভেটো প্রদানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন তারা। ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে যাতে ভবিষ্যতে ছাত্র অধিকার পরিষদ কিংবা অন্য কোনো সংগঠন সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে সাহস না পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করেন, ডাকসুর মতো একটি ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখাই শ্রেয়। আবার অন্য অংশ বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান বিবেচনা করলে ডাকসুতে তাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব অবৈধ বা অযৌক্তিক নয়।
অন্যদিকে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ছাত্ররাজনীতিতে নতুন করে এই সংঘাত আবারো প্রমাণ করছে যে, দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষা ও গবেষণায় মনোযোগী হওয়া, কিন্তু রাজনৈতিক দখলদারিত্বের কারণে বারবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে।