ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গ্রেপ্তার করেছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানকে। সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিলেও শেষমেশ আটক হয়ে আলোচনায় তিনি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও চাঞ্চল্য তৈরি করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার গ্রেপ্তার হওয়া। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করেছে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানকে।
সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটেই ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ২ নম্বর ব্যাটালিয়নে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান আলোচনায় চলে আসেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই তাকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং অনেক সংবেদনশীল কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
সেই আশঙ্কাতেই তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করেন। উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগরের হাকিমপুরের তেঁতুলিয়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে তিনি গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিএসএফের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে স্বরূপনগর থানার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় তাকে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও তার বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেয়। গত ১৭ আগস্ট দীর্ঘদিন দায়িত্বে অনুপস্থিত থাকা এবং বিভিন্ন অভিযোগের কারণে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। তবে গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি নতুন করে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, একজন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা যিনি একসময় ক্ষমতার দাপটে চলাফেরা করতেন, তাকে এভাবে সীমান্ত এলাকায় লুকিয়ে থেকে আটক হতে হওয়াটা আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। তাদের মতে, এটি শুধু একজন কর্মকর্তার গ্রেপ্তার নয়, বরং রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের মোড় ঘোরার ইঙ্গিত।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, চলতি বছরের জুন মাসে একই জেলার জগদ্দল এলাকা থেকে আরও এক বাংলাদেশি পুলিশ সুপার হাসান আরাফাত আবিদ এবং দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করেছিল বিএসএফ। তবে তারা বৈধ কাগজপত্রে ভারতে প্রবেশ করায় পরবর্তীতে মুক্তি পেয়ে যান। কিন্তু আরিফুজ্জামানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, এবং তার রাজনৈতিক পরিচিতি বিষয়টিকে আরও আলোচিত করে তুলেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে—ভারত সরকার তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে, নাকি আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে ভারতে রাখবে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকের মতে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ধারাবাহিকতা প্রমাণ করছে যে ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশে একটি বড় ধরনের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এ ঘটনাকে। বিশেষ করে আরিফুজ্জামানের মতো প্রভাবশালী একজন কর্মকর্তার সীমান্তে লুকিয়ে থেকে আটক হওয়া ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিক নির্দেশনা স্পষ্ট করে দিচ্ছে। এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের—এ গ্রেপ্তার আসলে কী ধরনের নতুন পরিস্থিতি তৈরি করবে।