গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের দাবি, বর্তমান শাসকেরা মাত্র এক বছরে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা শেখ হাসিনার আমলে ১৬ বছরে হয়েছিল। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশ আরও ভয়ঙ্কর সংকটে পড়বে।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “এরা মাত্র এক বছরে এমন সংকট তৈরি করেছে, যা শেখ হাসিনার সময়ে ১৬ বছরে হয়েছিল। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে সামনের দিনগুলোতে দেশ আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যাবে।”
সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, “আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা একটি ভুল ধারণা। কারণ বাস্তবতা হলো—এদের রাজনৈতিক স্পেসের বাইরে রেখে দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই নতুন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকেও রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতরে রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কিছুদিন আগে ব্র্যাকের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইজিডি একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সমর্থন নেমে এসেছে মাত্র ৭ শতাংশে। কিন্তু এই ফলাফল আসলে একটি নতুন বর্ণনা বা ন্যারেটিভ তৈরি করার কৌশল। আন্তর্জাতিকভাবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ এখনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জনসমর্থন ধরে রেখেছে। আর এই পরিসংখ্যানকে সামনে এনে পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর পথ তৈরি করা হচ্ছে।”
বিদেশি প্রভাবের দিকেও সতর্ক করে দেন নুর। তার মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেকাংশে পশ্চিমা দেশগুলোর উপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি পশ্চিমা বাজারের উপর দাঁড়িয়ে আছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১৩ বিলিয়নের মতো। এই শক্তিগুলো যদি বলে দেয়—‘তোমরা যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি না করো, তাহলে আমরা বাংলাদেশ থেকে শার্ট-প্যান্ট কেনা কমিয়ে দেব’—তখন দেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক চাপে পড়ে যাবে।”
নুর আরও বলেন, “সে সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা যদি দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি বাঁচাতে চান, তবে তাদেরকে বাধ্য হয়েই আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কারণ, অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াবে।”
তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতার কথাও স্বীকার করেন। নুরের ভাষায়, “আমরা যারা গত এক বছরে গণ-অভ্যুত্থানের দাবিদার ছিলাম, তারাও এমন কিছু কর্মকাণ্ড করেছি, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও আওয়ামী লীগকে আবারও রাজনীতিতে কামব্যাক করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই বাস্তবতাকে আমাদের স্বীকার করতে হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির মাঠে সস্তা বক্তব্যের সংস্কৃতিও তিনি সমালোচনা করেন। নুর মনে করেন, এই ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে এবং মূল ইস্যুগুলো আড়ালে চলে যাচ্ছে।
তার মতে, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক চাপ, অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভুলত্রুটি—সব মিলিয়ে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীল নেতৃত্ব, দূরদৃষ্টি ও সমঝোতাপূর্ণ রাজনীতি।
নুরের এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, তিনি আসলে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন, যা আগামী দিনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, তার মন্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে বিরোধী দলগুলোও ধীরে ধীরে বাস্তবতাকে মেনে নিচ্ছে এবং রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন সময়ে এই বক্তব্য এল, যখন একদিকে সরকারের নীতিনির্ধারণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান সংকট মোকাবিলার একমাত্র পথ হলো—সমঝোতা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি।