র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত আইজিপি) একেএম শহিদুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ এবং নতুন যুগের সূচনা বলে ধরা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে র্যাবের বিরুদ্ধে গুম, খুন, এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক এবং সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান ডিজির ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে এমন কাজে আর না জড়ানোর অঙ্গীকার, র্যাবের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছে।
নেতিবাচক ইতিহাসের পুনর্বিবেচনা
র্যাবের ইতিহাসে একদিকে সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা প্রশংসিত হলেও, অন্যদিকে গুম, খুন এবং নির্যাতনের ঘটনাগুলি সংস্থার ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গুম ও খুনের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি ক্ষমা চাওয়া এবং তাদের দুঃখ প্রকাশ করা এ ক্ষেত্রে একটি বিরল পদক্ষেপ।
এই ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে কি সত্যিই সংস্থাটি মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে? নাকি এটি শুধুই জনমত শান্ত করার একটি কৌশল?
গঠনমূলক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
র্যাব প্রধানের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত গুম-খুন কমিশনের কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত রয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ হবে?
অপরাধে জড়িত ১৬ র্যাব সদস্যের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবুও, হাজারো অভিযোগের মধ্যে মাত্র কয়েকটি তদন্তের আওতায় আসা এবং কয়েকজনের শাস্তি যথেষ্ট নয়।
জনমতের প্রতিক্রিয়া
র্যাবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে যে, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিশেষ মহলের নির্দেশে সংস্থাটি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তাই এই ধরনের বক্তব্য জনমনে নতুন আশার সঞ্চার করলেও, বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করতে হবে।
বিশেষ করে ছাত্র ও জনতার ওপর গুলি চালানোর ঘটনা এবং সাবেক চার মন্ত্রী ও ১৭ এমপিসহ ৩৫৩ জনের গ্রেফতার কার্যক্রম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা আরও ব্যাপকতর করতে হবে।
বাহিনীর সংস্কার ও ভবিষ্যৎ
র্যাবের বর্তমান ডিজি যে বার্তা দিয়েছেন, তা কেবল একক বক্তব্য নয়; এটি একটি দায়িত্বশীল সংস্থার প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। তবে বাহিনীর সংস্কার শুধু বক্তব্য দিয়ে সম্ভব নয়।
প্রস্তাবনা:
বিচারিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা: প্রত্যেকটি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা: র্যাবের কর্মকাণ্ডে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ: সংস্থার সদস্যদের মানবাধিকার সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
নিয়মিত তদারকি: র্যাবের কার্যক্রমের ওপর একটি স্বতন্ত্র তদারকি সংস্থা গঠন করা যেতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন: যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
র্যাব প্রধানের ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে আর গুম-খুনে না জড়ানোর অঙ্গীকার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা। তবে এটি শুধু একটি প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। সত্যিকার অর্থে সংস্থার সংস্কার, বিচারিক স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের মাধ্যমেই র্যাব জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
कोई टिप्पणी नहीं मिली