জাতীয় সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাকে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী’ আখ্যা দিলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এই ঘটনা বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনার যে যাত্রা শুরু হয়েছে, গতকাল ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ সাক্ষরের অনুষ্ঠানে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা সেই প্রচেষ্টাকেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা—এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এই বিশৃঙ্খলার জন্য সরাসরি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট কিছু উশৃঙ্খল ব্যক্তিকে দায়ী করেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ তার মন্তব্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, যারা বিশৃঙ্খলা করেছে, তারা ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নামে কিছু সংখ্যক ছাত্র নামধারী উশৃঙ্খল লোক, যাদের তিনি ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী’ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী এখনো বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যা গতকালের ঘটনাতেও দৃশ্যমান হয়েছে।
বিএনপি নেতা মনে করেন, বর্তমান সময়ে সবচাইতে বেশি জরুরি হলো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখা। গত বৃহস্পতিবার ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ সাক্ষরের মধ্য দিয়ে সেই যাত্রাই শুরু হয়েছে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোতে গণতান্ত্রিক সংস্কার আসবে, যার ফলে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সমস্ত অঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার সহ সকল মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন ও ভোট নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেজন্যই বিএনপি নতুন যাত্রা শুরু করেছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশের সমগ্র জাতি ও জনগণের প্রতি ধৈর্য, সহনশীলতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, তবেই সত্যিকার অর্থে একটি কার্যকর শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার জন্য ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ দায়ী করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধারা সঠিক কোনো সংগঠন নয়। তাদের কোনো ব্যক্তি এই বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত থাকতে পারে না।
তিনি আরও জানান, জুলাই যোদ্ধারা নামে একটি সংগঠন তাদের (ঐক্যমত কমিশনের) সাথেও কথা বলেছিল এবং তাদের একটি যৌক্তিক দাবি ছিল। সেই যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য তিনি নিজেও বিবৃতি দিয়েছিলেন এবং ঐক্যমত কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রিয়াজও সেটি সঠিকভাবে এড্রেস ও সংশোধন করেছিলেন। তাই তাদের অসন্তোষ থাকার কথা নয়।
অন্যদিকে, জাতীয় সনদ সাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপি এবং তিনটি বা চারটি বাম রাজনৈতিক দল উপস্থিত না হওয়া প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তাদের জন্য স্বাক্ষর করার সুযোগ উন্মুক্ত আছে এবং তিনি আশা করেন তারা ভবিষ্যতে সনদে স্বাক্ষর করবেন। তিনি মনে করেন, তাদের স্বাক্ষর না করায় আগামী নির্বাচনের জন্য এটি বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ গণতন্ত্রে ভিন্ন মত থাকতেই পারে এবং সবাই একমত হবে এমন কোনো কথা নেই।
বিএনপি নেতার এই কঠোর মন্তব্য ‘জুলাই সনদ’ ঘিরে শুরু হওয়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রায় চলমান বিভেদকে আরও স্পষ্ট করে তুলল।