জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত গোপালগঞ্জে ১৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। শহরে বাড়ছে মানুষের উপস্থিতি, কিন্তু আতঙ্ক রয়েই গেছে।
গোপালগঞ্জে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে টানা কারফিউ কিছুটা শিথিল করেছে প্রশাসন। শনিবার (১৯ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ১৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শহরের বাজার ও সড়কে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে।
কারফিউ শিথিলের ঘোষণার পর থেকেই গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চলাচল ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে শহরের কাঁচাবাজার, ফলের দোকান ও মুদির দোকানগুলোতে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সকালবেলায় লোকজনের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
তবে স্বস্তির মাঝেও সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে তীব্র আতঙ্ক। কারফিউ তুলে নিলেও পুলিশি অভিযান ও সম্ভাব্য গ্রেপ্তার আতঙ্ক অনেকের মধ্যে কাজ করছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে এলেও চারপাশে টহলরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি মানসিক চাপ তৈরি করছে।
শহরের বাণিজ্যিক এলাকা এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। যেহেতু শনিবার স্থানীয়ভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই অধিকাংশ মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানপাট এখনো বন্ধ রয়েছে। হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোর দরজাও তালাবদ্ধই রয়েছে।
এর আগে, গোপালগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। গত ১৬ জুলাই আয়োজিত এই কর্মসূচির পর পরই শহরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সেই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং ১৮ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৯ জুলাই শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলায় কারফিউ বলবৎ করা হয়।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই কারফিউ প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে প্রশাসন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ কার্যকর থাকবে।
এর মধ্যেই শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ আংশিকভাবে শিথিল করা হয়েছিল। এবার আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা থেকেই যাচ্ছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বাজার করতে বেরিয়েছি, কিন্তু চারপাশে পুলিশের টহল দেখে ভয় লাগছে। কখন কী হয় বোঝা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে হঠাৎ করেই শহরে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আর সেই সময় পর্যন্ত প্রশাসনও কঠোর নজরদারিতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।