গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের মধ্যে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছে, তা বাস্তবায়নের জন্য এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতান্ত্রিক শূন্যতার সময় দেশের নেতৃত্বের প্রশ্নে গুরুত্ব পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা। এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন দেশের অন্যতম সংবিধানপ্রণেতা এবং গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে শৃঙ্খলার আওতায় এনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব।
সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রয়াত রাজনৈতিক নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় এই আহ্বান জানান তিনি। সেখানে উপস্থিত না থাকলেও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
ড. কামাল হোসেন বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এই দেশ একদিন স্বপ্ন দেখেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক রাষ্ট্র গঠনের। কিন্তু ৫৩ বছর পেরিয়েও সেই অঙ্গীকার পূরণ হয়নি।
তিনি মন্টুকে স্মরণ করে বলেন, তিনি সবসময়ই জাতীয় ঐক্যের পক্ষে ছিলেন। স্বপ্ন দেখতেন একটি ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণ-আন্দোলনেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই ঐক্যের ভিত্তি আমাদের জাতীয় চেতনা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তরের সংবিধান এবং চব্বিশ সালের গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি শক্তি আমাদের পথ দেখায়। এখন বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়।
প্রয়াত মন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক। কোনো স্বার্থের কাছে মাথানত করেননি। তাঁর অবদান বর্তমান রাজনীতিকদের অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান রাষ্ট্রকাঠামোতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করার জন্য একটি মহল কাজ করছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গণ-অভ্যুত্থান আমাদের মধ্যে যে নতুন আশার সৃষ্টি করেছিল, তা এখন অনৈক্য ও বিভ্রান্তির কারণে ছন্দপতনের মুখে। কিন্তু আমরা এখনও আশাবাদী, নতুন করে গড়ে উঠবে একটি ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
শোকসভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, এবি পার্টির মো. দিদারুল আলমসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা।
বক্তারা সবাই একমত পোষণ করেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। প্রয়াত মন্টুর আদর্শ অনুসরণ করেই হতে পারে ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভিত্তি। আর সেই ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়েই গড়ে উঠতে পারে একটি নতুন বাংলাদেশ—যেখানে থাকবে না বৈষম্য, থাকবে গণতন্ত্র, মানবিকতা ও ন্যায়বিচার।