রাজধানীতে জাতীয় যুব সম্মেলনে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন— জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দেওয়া হলেও ‘জুলাই সনদে’ এক শতাংশও ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি সতর্ক করেছেন, ঐক্য না থাকলে আবারও বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে ‘জাতীয় যুবশক্তি’ আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে এক শক্ত বার্তা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন— জুলাই ঘোষণাপত্রে কিছু ছাড় দেওয়া হলেও ‘জুলাই সনদে’ কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তার মতে, এই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া রাজনৈতিক ক্ষমতায় যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ করার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে রাজনৈতিক সমীকরণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যারা এখনই সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত, তারা ভুল পথে হাঁটছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “অভ্যুত্থানের শক্তি এখনো রাজপথে সক্রিয়। গত এক বছরে আমরা অনেক বিশ্লেষণ করেছি, অনেক ছাড় দিয়েছি, কিন্তু আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, তবে জুলাই সনদে এক শতাংশও ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি সতর্ক করেন, নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও ১/১১ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ। নাহিদ ইসলামের মতে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার, তবে তা হতে হবে জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। “যতক্ষণ পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না,”—এমন কড়া হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এনসিপি আহ্বায়ক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “চাঁদাবাজি ও অপকর্ম কোনো রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেয়। যারা সুবিধাবাদী মনোভাব নিয়ে দলে প্রবেশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন— বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব জাহেদুল ইসলাম।
তাদের বক্তব্যে জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক সংস্কার এবং জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের আহ্বান উঠে আসে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা মনে করেন, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সৎ, জবাবদিহিমূলক ও গণমুখী রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি।
নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জুলাই সনদ নিয়ে তার অটল অবস্থান একদিকে তার দলের কর্মীদের উৎসাহিত করেছে, অন্যদিকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভাবিয়ে তুলেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে জুলাই সনদই হতে পারে কেন্দ্রীয় ইস্যু, যা ভবিষ্যতের ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণ করবে।