গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা এবং আনোয়ার হোসেনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় বন্দর প্রেসক্লাব তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঘোষণা করা হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশ।
গাজীপুরে ভয়াবহ নির্মমতা: সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা, আনোয়ার হোসেন গুরুতর আহত — বন্দর প্রেসক্লাবের প্রতিবাদে উত্তাল পরিবেশ
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং দমন-পীড়নের এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো গাজীপুরে।
সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িতদের জন্য চরম উদ্বেগজনক বার্তা দিয়ে, সম্প্রতি গাজীপুরে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। এই ভয়াবহ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরেক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন, যিনি ইট দিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি চাঁদাবাজি চক্রকে নিয়ে প্রকাশিত অনুসন্ধানী রিপোর্ট থেকে। নিহত তুহিন সম্প্রতি গাজীপুরের একটি চিহ্নিত চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। সেই খবর প্রকাশের জেরে চক্রটি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
শেষ পর্যন্ত সেই হুমকি বাস্তবে রূপ নেয়—তাকে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং আরেকজন সাংবাদিককে গুরুতরভাবে আহত করার ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে, বন্দর প্রেসক্লাব এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি আতাউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল আলম জাহিদ এক বিবৃতিতে নিহত সাংবাদিকের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং আহত সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
তারা তাদের বিবৃতিতে এই বর্বরোচিত ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলেন, "এই ধরনের হত্যাকাণ্ড শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, গোটা সাংবাদিক সমাজ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হত্যার সামিল।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশে একের পর এক সাংবাদিক হত্যা, হামলা, মামলা, হুমকি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এখনই ঐক্যবদ্ধ ও কঠোর অবস্থান না নিলে, বাকস্বাধীনতা ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা দেশের প্রতিটি সংবাদকর্মী, সংবাদ সংস্থা এবং সুশীল সমাজকে একত্রিত হয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার, ৯ আগস্ট বেলা ১১টায় বন্দর প্রেসক্লাব চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে সকল পেশাজীবী সাংবাদিক ও সংবাদপ্রেমী নাগরিকদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে গাজীপুরের স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি এলাকায় একাধিক সাংবাদিক হুমকির মুখে রয়েছেন। চাঁদাবাজ চক্র ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো সংবাদ প্রকাশে বাধা দিচ্ছে, এমনকি সরাসরি হত্যার হুমকিও দিচ্ছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো পর্যন্ত মূল আসামিদের ধরতে পারেনি — যা জনমনে অসন্তোষ তৈরি করেছে।
সাংবাদিক সমাজ মনে করছে, যদি এই ঘটনার সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে, যা দেশের গণতন্ত্র ও মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।