গাজীপুরে ভিডিও ধারণের জেরে সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দায়ের হয়েছে হত্যা মামলা, সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ৫ জন। পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে, প্রকাশ পায়নি মূল পরিকল্পনাকারী।
গাজীপুর আবারও কেঁপে উঠলো এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মহানগরের ব্যস্ততম চান্দনা মসজিদ মার্কেট এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্থানীয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, জনসম্মুখে এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ স্থানীয়রা।
পুলিশ জানায়, সাংবাদিক তুহিন নিহত হওয়ার আগে একটি সহিংস ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন। সে সময় এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হচ্ছিল—এ দৃশ্য ধারণ করাই হয়তো হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
ঘটনার পরদিন, শুক্রবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিন খান গণমাধ্যমকে জানান, "ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় এখনই প্রকাশ করছি না।"
তবে এও স্পষ্ট করেছেন তিনি যে, আটক ব্যক্তিদের কাউকে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়নি। কেবল সন্দেহের বশেই তাদের আটক করা হয়েছে। এ বক্তব্যেই স্পষ্ট, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এরই মধ্যে নিহত তুহিনের ভাই সেলিম মিয়া অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে বাসন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
সাংবাদিক তুহিন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিলেন সাহসী প্রতিবেদক হিসেবে। তিনি সবসময় অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো কোনো অপরাধী চক্র তার ভিডিও ধারণে ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, তুহিন অনেক সাহসী ছেলে ছিল। অপরাধী দেখলেই তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করত। আমরা চাই হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
তবে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের দাবি, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে। একাধারে প্রশ্ন উঠছে—একজন সাংবাদিক প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারা গেল, অথচ এখনও মূল ঘাতকেরা অধরা কেন?
এ হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়, এটি মুক্ত সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।