গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে ২৩.৬ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। কুয়ালালামপুরে হাজারো মানুষের সমাবেশে তিনি ইসরায়েলের নৃশংসতার তীব্র নিন্দা জানান।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় ধরনের মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি জানালেন, মালয়েশিয়া সরকার গাজাবাসীর জন্য অতিরিক্ত ২৩.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দেবে। চলমান হত্যাযজ্ঞ, দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকটে এই সহায়তা হবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি মালয়েশিয়ার সংহতি প্রকাশের একটি বাস্তব উদাহরণ।
রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানী কুয়ালালামপুরের ঐতিহাসিক মারদেকা স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামার খবরে বলা হয়, নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এ সমাবেশে অংশ নেন। সাদা পোশাক এবং ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে তারা গাজার পক্ষে অবস্থান নেন। হাতে ছিল নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড—‘গাজার পক্ষে’ ও ‘ইসরায়েলবিরোধী’।
নিজের বক্তৃতায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, গাজায় নিরপরাধ শিশুদের হত্যা করে নেতানিয়াহু মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ করছে। আনোয়ার ইব্রাহিম তাকে ‘নিষ্ঠুর ও উন্মাদ’ আখ্যায়িত করেন।
‘মাই মালয়েশিয়া উইথ গাজা’ শিরোনামে আয়োজিত এই বিশাল সমাবেশটি ছিল তিন দিনব্যাপী সুমুদ নুসান্তারা কার্নিভাল-এর সমাপনী আয়োজন। ২২ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত চলা এই কার্নিভালে গাজা ও ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এতে ছিল আকর্ষণীয় আয়োজন—ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্মিত ‘গাজা টাইম টানেল’ অভিজ্ঞতা এবং ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের ওপর নির্মিত একাধিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, শুধু মালয়েশিয়াই নয়, গোটা মুসলিম উম্মাহ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন একসঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। তিনি আহ্বান জানান, বিশ্বের বিভিন্ন শক্তি যেন ইসরায়েলের ওপর চাপ অব্যাহত রাখে এবং গাজায় চলমান নৃশংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।
ফিলিস্তিনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, হাসপাতাল ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া গাজাবাসীর বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের টানা অভিযানে ইতিমধ্যে গাজায় ৬২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার এই সহায়তা গাজাবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।