গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫০ জন নিহত, মানবিক সংকট চরমে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হচ্ছে। সর্বশেষ শুক্রবার (২২ আগস্ট) পরিচালিত ড্রোন ও বিমান হামলায় অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ..

আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে একটি বাড়িতে ড্রোন হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিহত হন। মধ্য গাজার সালাহউদ্দিন সড়কে খাদ্যসাহায্য বিতরণকেন্দ্রের কাছে গোলাবর্ষণে প্রাণ হারান আরও পাঁচজন।

শুধু সামরিক ঘাঁটি বা কৌশলগত স্থাপনা নয়, ইসরায়েলি বাহিনী সরাসরি সাধারণ মানুষকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। রাফাহ শহর ও ওয়াদি গাজায় খাদ্যসাহায্যের অপেক্ষায় থাকা মানুষদের ওপর চালানো হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। বহু আহত ব্যক্তিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গাজার সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, সাবরা, জাইতুন, আল-তুফাহ, সাবরা ও জাবালিয়া এলাকায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এসব এলাকায় নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।


গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন অন্তত দুইজন। গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন ২৭১ জন, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ করতে না পারায় পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ১০০ জনেরও বেশি। আহত হয়েছেন আরও কয়েক লাখ মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার অধিকাংশ এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং কয়েক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।


চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অব্যাহত বোমাবর্ষণ, খাদ্যসাহায্য বিতরণকেন্দ্রে হামলা এবং অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে তীব্র সমালোচনার মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।


যুদ্ধ ও অবরোধের মধ্যে গাজা এখন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকটে প্রতিদিন নতুন করে বাড়ছে মৃত্যু। আন্তর্জাতিক চাপ ও আইনি প্রক্রিয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলি অভিযান থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে তা অনিশ্চিত হলেও গাজার সাধারণ মানুষ প্রতিদিন নতুন আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করছে।

No comments found