চীন গাজা শহর দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে এবং অবিলম্বে এ বিপজ্জনক পদক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। বেইজিং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তাদের সমর্থনও পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নতুন দখল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে চীন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) বেইজিংয়ে আয়োজিত এক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, “গাজা ফিলিস্তিনি জনগণের সম্পত্তি, যা কোনোভাবেই দখল বা সামরিক নিয়ন্ত্রণের আওতায় নেওয়া উচিত নয়।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। লিন জিয়ান আরও মন্তব্য করেন, “গাজা শহরকে সামরিক নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার মতো পদক্ষেপ শুধু পরিস্থিতিকে আরও জটিল করবে এবং সহিংসতা বৃদ্ধি করবে। ইসরায়েলকে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে হবে।”
এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, দেশটির মন্ত্রীসভা গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে তা পুরো গাজা উপত্যকা দখলের পথে ইসরায়েলকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে।
গত মাসের শেষ দিকে চীনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত ঝাই জুনও একই ধরনের সতর্কতা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “গাজার ভৌগোলিক অবস্থান জোরপূর্বক পরিবর্তনের যে কোনো প্রচেষ্টা শান্তি বয়ে আনবে না।” একই সঙ্গে তিনি বেইজিংয়ের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
গাজার সংকটের সূত্রপাত ২০২৩ সালের অক্টোবরে, যখন আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসী হামলার জবাবে হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আকস্মিক অভিযান চালায়। এ অভিযানে প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপক বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত আছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক নারী ও শিশু। ধারাবাহিক বোমাবর্ষণে গাজার বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ভেঙে পড়েছে অবকাঠামো, এবং তীব্র খাদ্য সংকটের ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে পাশ কাটিয়ে “গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন” নামে একটি পৃথক ত্রাণ বিতরণ উদ্যোগ চালু করে। যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগে সমর্থন দিলেও, বিশ্বব্যাপী ত্রাণ সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে, একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দেয়।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী বারবার খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগের মুখে রয়েছে। এসব হামলায় শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র নিন্দার জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে।
চীনের কূটনৈতিক মহল মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তারা বারবার জোর দিয়ে বলছে, কেবল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারে। আর এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য।