close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ফৌজদারি কার্যবিধি কার্যকরে গ্রেপ্তার ও আটকে হয়রানি কমবে : আসিফ নজরুল..

Mahamud Mithu avatar   
Mahamud Mithu
নতুন ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ, যা গ্রেপ্তার ও আটকে হয়রানি কমাবে।..

ঢাকা: আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ উপদেষ্টা পরিষদ দ্বারা আজ অনুমোদিত হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক স্ট্যাটাসে তিনি জানান, এই নতুন আইন কার্যকর হলে গ্রেপ্তার ও আটক সংক্রান্ত হয়রানি কমবে, পুলিশের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিচার কাজের গতি বাড়বে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, "প্রস্তাবিত আইনের মূল দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে, পুলিশকে পরিচয় প্রকাশ করে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং গ্রেপ্তারের পর মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্ট পূরণ করতে হবে। এ ছাড়া, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির সকল আইনি সুরক্ষা প্রতিপালিত হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে এবং মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্টে তার চেকলিস্ট পূরণ করতে হবে।"

প্রস্তাবিত আইনে ৫৪ ধারা সংশোধন করার মাধ্যমে পুলিশের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো কগনিজেবল অপরাধ পুলিশের সামনে ঘটতে হবে অথবা পুলিশকে সন্তুষ্ট হতে হবে যে আসামি অপরাধ করেছে, এবং সন্তুষ্টির কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে।

গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে গ্রেপ্তারকৃতের পরিবারকে যত দ্রুত সম্ভব, তবে অবশ্যই ১২ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে তার আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।

ড. আসিফ নজরুল আরও উল্লেখ করেন, "গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি বা রিমান্ডের পর আসামি অসুস্থ বা আহত হলে ডাক্তার কর্তৃক পরীক্ষা করতে হবে এবং আঘাতের কারণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের দায় থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।"

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যে সংস্থাই গ্রেপ্তার করুক না কেন, গ্রেপ্তারের তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় জিডিভুক্ত করতে হবে এবং প্রতিদিনের গ্রেপ্তারের তথ্য ও তালিকা থানায় ও জেলা/মেট্রো পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রদর্শন করতে হবে।

আদালত সাক্ষী ও ভিকটিমের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করতে পারবে এবং সাক্ষীর প্রয়োজনীয় খরচও দিতে পারবে।

নতুন আইন অনুযায়ী, এক মামলায় পুলিশ রিমান্ড কোনোভাবেই ১৫ দিনের বেশি দেওয়া যাবে না। আগে এই সীমা ছিল না। মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে বাধ্যতামূলক সাজা দিতে হবে এবং অর্থদণ্ড বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করা হয়েছে।

এই নতুন ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন কার্যকর হলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে বিচার প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পাবে এবং নির্যাতন ও হয়রানি কমে আসবে।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নতুন আইনটি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা বাড়াতে হলে এই আইন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

নতুন এই অধ্যাদেশের প্রভাব বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা এবং পেশাদারিত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার কারণে বিচারপ্রার্থীরা সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী হতে পারেন।

তবে, আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে, পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এই আইনের সুফল পুরোপুরি অর্জন করা কঠিন হতে পারে।

ভবিষ্যতে এই আইনের কার্যকারিতা এবং তার প্রভাব নিয়ে আরও বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, আইন বাস্তবায়নের পরবর্তী পর্যায়ে ফলাফল পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

Nema komentara