বিএনপি উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের বাসার সামনে বিক্ষোভকারীরা গ্রেফতারের দাবিতে অবস্থান নেয়। দুপুরে সেখানেই নামাজ আদায় করে তারা।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সোমবার দুপুরে এক ভিন্ন চিত্রের সাক্ষী হলো পথচারীরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের বাসার সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা শুধু স্লোগানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে নামাজও আদায় করেছে। এই ঘটনাকে ঘিরে পুরো এলাকা মুহূর্তেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সকালে থেকেই ‘বিপ্লবী ছাত্র জনতা’ ব্যানারে মিছিল করে সেখানে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের মধ্যে ছিল ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’, ‘জুলাই রাজবন্দী’-সহ আরও কয়েকটি সংগঠনের কর্মী। তারা একত্রিত হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে এবং ফজলুর রহমানকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানায়। দুপুরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান ধরে রেখেই সেখানে নামাজ আদায় করেন, যা পথচারী ও স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনাস্থলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থায় ছিল। ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সকালে জুলাই আন্দোলনের কিছু লোক ফজলুর রহমানের বাসার সামনে অবস্থান নেয়। আমাদের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।”
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ফজলুর রহমানের দেওয়া একটি বিতর্কিত মন্তব্যই এই ঘটনার সূত্রপাত বলে জানা গেছে। তার মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন সংগঠন সরব হয়ে ওঠে। বিএনপিও এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসে এবং দ্রুত তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। নোটিশে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফজলুর রহমানকে জবাব দিতে হবে, নইলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে সেগুনবাগিচায় তার বাসার সামনে প্রথমে কিছু লোক জড়ো হয়। তারা স্লোগান দিতে থাকে এবং ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আরও লোকজন আসতে শুরু করে এবং আন্দোলনের রূপ স্পষ্ট হতে থাকে।
নামাজ পড়া বিক্ষোভকারীদের এই কর্মসূচি নজিরবিহীন বলে অনেকেই মনে করছেন। সাধারণত রাজনৈতিক আন্দোলনে স্লোগান, অবস্থান বা মিছিল দেখা গেলেও নামাজের মাধ্যমে প্রতিবাদের এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। এর মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা একদিকে যেমন তাদের অবস্থানকে ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছে, অন্যদিকে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফজলুর রহমানের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা কেবল একটি ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং এটি বিএনপির ভেতরকার টানাপোড়েন এবং জনমানসে দলের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে আন্দোলন আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করবে।
এই ঘটনার পর সেগুনবাগিচার পুরো এলাকা ঘিরে এক ধরনের টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা ফজলুর রহমানকে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
রাজধানীতে এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি রাজনীতির অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। আগামী দিনগুলোতে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে দলীয় পদক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ—দুটিই রাজনৈতিক অঙ্গনকে সরগরম করে তুলবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।