আন্তর্জাতিক যুব দিবসের সম্মেলনে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বিএনপির ফজলুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে যুবশক্তির আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে উত্তরের মুখ্য সংগঠক ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের বক্তব্যকে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আশাহতকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, এই দুই নেতার অবস্থান ও মন্তব্য দেশের তরুণদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে।
সারজিস আলম বলেন, “আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তাঁরা বিএনপির আসল প্রতিনিধিত্ব করেন না। কিন্তু যদি দেশের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা থাকে, তাহলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি অতীতের উদাহরণ টেনে বলেন, “আগে নেতাদের আদালতে হাজিরা দেওয়ার দৃশ্য দেখে অনুপ্রাণিত হতাম। কিন্তু আজ যদি আমি কোনো নেতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলি, তাহলে আমার নামে ১০ কোটি টাকার মামলা হয়। আমরা স্তব্ধ থাকব না—যে দলই হোক, আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা এনসিপি—অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।”
সম্মেলনের আলোচনায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন টেবিল আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি আলোচনায় সংস্কারের নিশ্চয়তা না আসে, তাহলে রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নিতে হবে। সংস্কার নিয়ে টালবাহানা চললে রাজপথে নেমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”
এ সময় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে, বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে—আবার বলা হচ্ছে হবে না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তবে সংস্কারের জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের রক্তের মর্যাদা রক্ষায় সরকারকে জবাব দিতে হবে।”
প্রশাসনের চরিত্রগত পরিবর্তন হয়নি অভিযোগ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “নির্বাচনের আগে প্রশাসনকে সংস্কার করে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি হাসিনার আমলের নির্বাচনে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি দেশের মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, “পৃথিবীর কোথাও এমন মিডিয়া আছে কি না সন্দেহ। এখানে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ডিরেক্ট নিউজ পাঠানো হয়, এবং তা প্রকাশ করা হয়। এজেন্সিগুলোর নগ্ন হস্তক্ষেপে মিডিয়া এখন জনগণের কণ্ঠস্বর নয়, বরং এজেন্সির মুখপত্রে পরিণত হয়েছে।”
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কেন বিদেশি শক্তির নামে স্লোগান তুলতে হয়, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো পরিচয় সংকট নেই, আছে হীনমন্যতা। এই হীনমন্যতা বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। বিদেশি সহযোগিতার ওপর নির্ভর না করে আমাদের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি—যা জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “জুলাই আমাদের শিখিয়েছে ফ্যাসিবাদকে কবর দিতে, শেখ হাসিনাকে বিদায় জানাতে এবং আয়নাঘর ধ্বংস করতে। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া বিকল্প নেই, সেটি হতে হবে ইস্পাত কঠিন, যা কোনোভাবেই ভাঙা বা মচকানো যাবে না।”
এই সম্মেলনে বক্তারা বারবার জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলের ভেতরে ও বাইরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই, প্রশাসনিক সংস্কার এবং প্রকৃত জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সঠিক পথ তৈরি করতে হবে। তাদের মতে, দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়াই এখন সময়ের দাবি।