ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন: আখতার হোসেনের নেতৃত্বের গল্প

Mahamud Mithu avatar   
Mahamud Mithu
আখতার হোসেনের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন একসূত্রে বেঁধেছে পুরো বাংলাদেশকে।..

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন এক ঐতিহাসিক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এই আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রতিবেদক আল সাদী ভূঁইয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আখতার হোসেন আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, নেতৃত্ব এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।

### আন্দোলনের সূচনা ও প্রেক্ষাপট

আখতার হোসেন জানান, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে যে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও যৌক্তিক দাবি-আন্দোলন। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কখনোই সম্পূর্ণ কোটা বাতিল চাননি; বরং যুগোপযোগী সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। এই আন্দোলনের সূচনা থেকেই আখতার হোসেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

তিনি বলেন, "কোটা সংস্কার আন্দোলন এক ঐতিহাসিক ঘটনা। শিক্ষার্থীরা সমগ্র দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল। সরকার তখন আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে কোটা পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেয়।"

### একতরফা নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

আখতার হোসেন ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেন, "সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরো বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হলেন। পূর্বের আন্দোলনগুলোর মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতাকাঠামোর সামান্য চিড় ধরেছিল, কিন্তু সেটি সারতে তারা পরবর্তীতে মরিয়া হয়ে উঠে।"

তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের পর, উচ্চ আদালতে রিট করে কোটা ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনা হয়। "আমার তৎকালীন সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনা শুরু করি। এরপর ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেই," বলেন আখতার।

### নেতৃত্বের কৌশল ও অভিজ্ঞতা

আখতার হোসেন জানান যে, আন্দোলনের শুরুতে তিনি সরাসরি অংশ না নিয়ে পেছন থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। "স্বাভাবিকভাবেই ক্যাম্পাসে আমার দীর্ঘদিনের একটি রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিলে সরকার সহজেই এটিকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যেত," বলেন আখতার।

তিনি আরও বলেন, "আমাদের কৌশল ছিল, শুরুতেই যেন সরকার এটিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে দমন করতে না পারে। তাই আমি নিজেই আন্দোলনের সামনের সারিতে না থেকে পেছন থেকে এবং আশপাশে থেকে সংগঠক হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।"

### ভবিষ্যৎ প্রভাব ও মূল্যায়ন

আখতার হোসেনের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তার নেতৃত্বের কৌশল, দৃঢ়তা এবং শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করার ক্ষমতা তাকে দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ভবিষ্যতে এই আন্দোলনের প্রভাব এবং আখতার হোসেনের নেতৃত্ব বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই আন্দোলন আখতার হোসেনকে শুধু ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতায় পরিণত করেনি, বরং তার নেতৃত্বে আন্দোলন পুরো জাতিকে একসূত্রে বেঁধে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধরণের আন্দোলন ও নেতৃত্ব দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়।

No comments found