বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরছে—জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে একমত হয়েছে সব রাজনৈতিক দল। তবে বাতিল করতে হলে প্রয়োজন গণভোট।
বহু বিতর্কিত ও রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টিকারী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি অবশেষে ফিরে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত আসে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক বৈঠকের চূড়ান্ত পর্যায়ে এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, "সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে সংবিধানে এই ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ার পর ভবিষ্যতে তা বাতিল করতে হলে কেবল সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট যথেষ্ট হবে না—এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে গণভোট প্রয়োজন হবে।
ড. রীয়াজের ভাষ্যমতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনরায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ৫৮(ক), ৫৮(খ), ও ৫৮(ঙ) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা যেমন অনুচ্ছেদ ৮ (প্রস্তাবনা), ৪৮ (রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা), ৫৬ (মন্ত্রিপরিষদ গঠন), ও ১৪২ (সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি) সংশোধনের বিষয়েও আলোচনা হয়। এসব ধারা সংশোধন করতে হলে গণভোট ছাড়া কোনো বিকল্প পথ খোলা থাকবে না।
তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার একবার সংবিধানে ঢুকে গেলে, সেটি যদি ভবিষ্যতে কোনো সরকার বাতিল করতে চায়, তাহলে তা যেন রাজনৈতিক খেয়ালখুশির বিষয় না হয়। এই বিষয়টি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করতে হবে। তাই গণভোটকে আবশ্যক শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে।
ড. রীয়াজ আরও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে কোনোরকম মতভেদ নেই। এই অভূতপূর্ব ঐকমত্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য এক ইতিবাচক বার্তা বহন করে বলেও মত দেন তিনি।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন, সেটি নিয়ে একটি সম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। এতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা কমবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন আরও বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার একটি বড় ধরনের সমাধান হয়ে উঠতে পারে। বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধী দল দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে ক্ষমতাসীন দল শুরুতে বিরোধিতা করলেও এখন তারা আলোচনায় ফিরে এসেছে, যা পরিস্থিতির গতিপথ পাল্টে দিয়েছে।