কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মজনু প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ফেসবুকে ফজলুর রহমানকে নিয়ে সমালোচনা করলে আগে হাত কেটে দিতে হবে। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতার এক বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ফেসবুকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই হাত কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন রায়টুটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনু। তার এই বক্তব্যের ভিডিও ইতোমধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায়। ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে এ বক্তব্য দেন মজনু। স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপির উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও তার বাড়ির সামনে হামলার প্রতিবাদে ইটনা ও অষ্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এর অংশ হিসেবে রায়টুটি ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হলে সেখানে বক্তব্য দেন মজনু।
তার বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমাদেরকে এই পর্যন্ত যা করছে, গতকাল পর্যন্ত বাদ দিয়েছি। আজ থেকে কোনো ছাড় নেই। যদি ফেসবুকে কোনো লেখালেখি করে, সবাই ফেসবুকে ঢুকবেন। যদি ফজলুর রহমানকে নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করে, আগে হাত কাটবেন, পরে আমার কাছে দিবেন। আগে হাত পরে হলো সালিশ।”
এই প্রকাশ্য হুঁশিয়ারির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন বক্তব্যকে ভয়ঙ্কর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করার জন্য ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনুর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে ভিডিওটি নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ লিখেছেন, “রায়টুটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজনু মিয়া বলেন, ফজলুর রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে কেউ সমালোচনা করলে আগে তার হাত কাটতে হবে তারপর কথা। এখনও ক্ষমতায় আসেনি, তাতেই এই অবস্থা। এরা ক্ষমতায় এলে মানুষের কী অবস্থা করতে পারে চিন্তা করুন।”
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক আহ্বায়ক হাফেজ ইকরাম হোসেন তার ফেসবুক আইডিতে ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “যেমন নেতা তেমন কর্মী! ফেসবুকে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই হাত কাটার হুঁশিয়ারি!”
এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এমন প্রকাশ্য হুমকি অশুভ দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়লেও এখনও পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতার মুখে এমন বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য, এবং এর প্রভাব রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কতটা নেতিবাচক প্রতিফল ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনার জবাব গণতান্ত্রিকভাবে না দিয়ে এমন সহিংস হুমকি দেওয়া দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি অবিলম্বে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে খতিয়ে দেখা উচিত।