মালয়েশিয়া সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। অর্থনীতি পুনর্গঠন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও বিদেশি বিনিয়োগ আহ্বান ছিল আলোচনার মূল বিষয়।
বাংলাদেশ আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত — এমন ঘোষণা দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মালয়েশিয়ার রাজধানী পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো' সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "বাংলাদেশ আজ এক নতুন অধ্যায়ের পথে হাঁটছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক পুনর্গঠনেও আমরা মনোযোগী। আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমাদের লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা।
বৈঠকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, "আমরা এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই যা টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।" এসময় মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, "বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়া যে সুযোগ তৈরি করেছে, তা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।" তিনি মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, "জ্বালানি, অবকাঠামো, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।"
রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, "রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই মানবিক সংকট শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। আমরা আসিয়ানের দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানাই, তারা যেন সক্রিয় ভূমিকা রাখে।"
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৈঠকে ড. ইউনূসের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, "বাংলাদেশের নেতৃত্বে তিনি যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করছেন, তা প্রশংসনীয়।" আলোচনার শেষে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, হালাল খাদ্য শিল্প ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়।
এর আগে সফরের দ্বিতীয় দিনে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় আনোয়ার ইব্রাহিম নিজ কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান। লাল গালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার এবং উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শন করা হয়। পরবর্তীতে দুই নেতা একান্ত বৈঠকে মিলিত হয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার এ বৈঠক দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।