অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি মালয়েশিয়া সফরে নির্বাচনী সংস্কার, শ্রমবাজার ও হালাল খাতের বিনিয়োগ প্রসঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন।
বাংলাদেশ আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মাইলফলকের দিকে এগোচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন যে, দেশ আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বিদেশি গণমাধ্যমে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল একটি সংস্কারকেন্দ্রিক পথ তৈরি করা, যাতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো যায়। তিনি দাবি করেন, গত এক বছরে সরকার অনেক কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেছে এবং এখন সেই প্রক্রিয়া একটি সুসংগঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।
তিনি জানান, চলতি মাসের শেষ দিকে নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচনের নিয়ম, প্রক্রিয়া ও কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে। ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দেশের জনগণ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পাবে।
সাক্ষাৎকারে তিনি শুধু নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেননি, বরং দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকেও গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের প্রসঙ্গ তিনি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। মালয়েশিয়ার সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিলে তা দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান সমস্যা ও জটিলতা সমাধানের প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
এছাড়া, বৈশ্বিক বাজারে হালাল পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান, বাংলাদেশ যেন এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে হালাল পণ্যের উৎপাদন খাত সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, হালাল পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে এবং যথাযথ উদ্যোগ নিলে তা রপ্তানি আয়ের একটি বড় খাত হয়ে উঠতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন সঠিক পথে এগোচ্ছে। দেশের জনগণ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে জনগণই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করাই এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। মালয়েশিয়া সফরে তার এই বক্তব্য শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ড. ইউনূসের এই ঘোষণা কার্যত বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কেবল সরকার পরিবর্তনের নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণেরও একটি বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।