জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সরকারের সদিচ্ছা ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকলে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংস্কার ও বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মানবাধিকার সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলোকে দমন করা হয়েছে। এটি দেশের গণতন্ত্রকে দুর্বল করেছে এবং নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে দেশ নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। এখন প্রয়োজন পুরোনো সংস্কৃতি ভেঙে নতুন রাষ্ট্রীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছি না, বরং আমরা চাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কার হোক।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, অনেক সময় এনসিপিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন দলটি নির্বাচনের বিপক্ষে। তবে প্রকৃতপক্ষে এনসিপি নির্বাচন বিমুখ নয়। তিনি স্পষ্ট করে জানান, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে দলের কোনো আপত্তি নেই—আগামীকালও নির্বাচন হতে পারে। তবে নির্বাচনকে অর্থবহ করতে হলে আগে সংস্কারের স্পষ্ট রূপরেখা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তার ভাষায়, “আমাদের ফোকাস হচ্ছে সংস্কার বাস্তবায়ন ও বিচারের সুস্পষ্ট কাঠামো। যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে এবং সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংস্কার ও বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব।”
তিনি এ সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, গুম ও নিখোঁজের মতো ভয়াবহ ঘটনা দেশের জন্য কলঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গঠিত গুম কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, এই কমিশনের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে, যা সত্য অনুসন্ধান ও ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহর মতে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে প্রথমেই সুশাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সর্বদলীয় ঐক্য। তিনি সকল রাজনৈতিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তারা ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সংস্কারিত ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখে।
তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, এনসিপি নির্বাচন বর্জন নয়, বরং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়াকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি মনে করেন, যদি সময়মতো এই পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই একটি নতুন যুগের সূচনা সম্ভব।