কুড়িগ্রামে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, এতদিন সংসদে যোগ্য নেতৃত্বের বদলে গান গাওয়া ও লেখা দেখে পড়ার মতো লোকজন এমপি হয়েছেন। তিনি দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দৃঢ় হতে আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অতীতের সংসদ সদস্যদের যোগ্যতা এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। শনিবার (১৬ আগস্ট) অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, যারা এমপি হয়েছেন তারা সংসদে গিয়ে জনগণের সমস্যার কথা বলার বদলে গান গাইতেন। এমনকি এমনও এমপি হয়েছে যাকে আগে থেকে স্ক্রিপ্ট লিখে দিলেও দাঁত ভেঙে যাওয়ার মতো কষ্ট করে তা পড়ে শোনাতেন। এইরকম মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছে আমাদের সমাজকে।”
উলিপুর উন্নয়ন ফোরামের আয়োজনে মহারানি স্বর্ণময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এবং এলাকার কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উলিপুর উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী।
জাহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বিগত সরকারের দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। কিন্তু গত ১৫ বছরে এমন লুটপাট হয়েছে যে, সেই টাকা দিয়ে অন্তত চারবার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা যেত। আজ সামান্য একজন সরকারি অফিসের পিয়ন পর্যন্ত দুর্নীতির টাকায় ঢাকায় ২০তলা বিল্ডিং বানাতে পারে। অথচ কৃষকদের ঘাম ঝরানো অর্থ দিয়ে এইসব বিলাসিতা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, শহীদ আবু সাঈদ আমাদের শিখিয়ে গেছেন কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে লড়াই করতে হয়। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি জীবন দেব, তবুও জালিমের কাছে মাথা নত করব না।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিবির সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, জিপিএ-৫ পাওয়া সব শিক্ষার্থীও ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না। তাই শুধু গ্রেড দিয়ে থেমে থাকা যাবে না, সবারকেই পরিশ্রমী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। যারা সত্যিকার অর্থে দেশের জন্য কাজ করবে, তাদেরই ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে হবে।”সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। মোট ২২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নেয় এবং তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শাহ্ হোসাইন আহমদ মেহেদী, জামায়াত নেতা মোস্তাফিজার রহমান, উলিপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মশিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
কুড়িগ্রামের এই অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক বক্তব্য, শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা এবং দুর্নীতিবিরোধী বার্তার কারণে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের যোগ্যতা নিয়ে শিবির সভাপতির তীব্র সমালোচনা নতুন করে আলোচনায় এনেছে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানদণ্ডের প্রশ্ন।