বিসিবি নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তামিম ইকবালসহ ১০ জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। তামিমের অভিযোগ, এটি নির্বাচন নয় বরং ফিক্সিং, আর এতে ক্রিকেটই পরাজিত হলো।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচন নিয়ে একের পর এক বিতর্ক যেন থামছেই না। সর্বশেষ নাটকীয় সিদ্ধান্তে দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু তামিমই নন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আরও ১০ জন প্রার্থী বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে সবার মুখে একটাই অভিযোগ—সরকারের বর্তমান ক্রীড়া প্রশাসন এই নির্বাচনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। ফলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের কোনো পরিবেশ তারা দেখতে পাচ্ছেন না। তাই তারা সম্মিলিতভাবে এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তামিম স্পষ্ট ভাষায় সাংবাদিকদের বলেন, “যেভাবে এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া হয়েছে সেটা নির্বাচন নয়। যাকে যখন সুবিধা হয়েছে তখনই নিয়ম পাল্টানো হয়েছে। বিসিবির ইতিহাসে এই নির্বাচন এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এটা নির্বাচন নয়, নিছক ফিক্সিং। এখানে অনেকেই জিতবে, চেয়ার দখল করবে, কিন্তু আসলে ক্রিকেটই হেরে গেল।
বিসিবি নির্বাচনে মূলত ক্যাটাগরি-১, অর্থাৎ ক্লাব ক্যাটাগরি থেকেই সবচেয়ে বেশি প্রার্থী নাম প্রত্যাহার করেছেন। এই ক্যাটাগরি থেকেই তামিম ইকবালের সঙ্গে আরও আটজন প্রার্থী সরে দাঁড়ান। তারা হলেন—সাইদ ইব্রাহিম, ইসরাফিল খসরু, রফিকুল ইসলাম বাবু, বোরহানুল পাপ্পু, মাসুদজ্জামান, আসিফ রাব্বানি, মির্জা ইয়াসির আব্বাস এবং সাব্বির আহমেদ রুবেল। এছাড়াও ক্যাটাগরি-১ থেকে মীর হেলাল এবং ক্যাটাগরি-৩ থেকে সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
বিসিবির এই অস্থিরতার মূল কারণ পরিচালক পদে ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা বৈঠক ভেস্তে যাওয়া। উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ বিতর্কিত ১৫ ক্লাবের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেন। আদালতও নির্দেশ দেন, ওই ১৫ ক্লাব নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভোটের সমীকরণ বদলে যায়।
তামিম ও তার প্যানেলের জন্য এই ১৫ ক্লাব ছিল বড় সমর্থনভিত্তি। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা কার্যত শক্তি হারালেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তামিম শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেন।
বিসিবি নির্বাচন কমিশনার ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “আমরা আদালতের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য। কাউকেই আদালতের রায়ের বাইরে গিয়ে সুযোগ দেওয়া যাবে না।” এর মানে দাঁড়াচ্ছে, বিতর্কিত ওই ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলররা ভোট দিতে বা প্রার্থী হতে পারবেন না।
তামিম ইকবাল ও তার সঙ্গীদের সরে দাঁড়ানোর পর আগামী ৬ অক্টোবরের বিসিবি নির্বাচন কার্যত একতরফা হয়ে পড়ছে। ক্রিকেট অঙ্গনের অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন—এই নির্বাচন তাহলে কি সত্যিই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে যাচ্ছে?
তামিম ইকবালের অভিযোগ এবং একের পর এক প্রার্থীর সরে দাঁড়ানো প্রমাণ করছে, বিসিবির নির্বাচন এখন আর শুধু বোর্ডের ভোটযুদ্ধ নয়; বরং দেশের ক্রীড়া রাজনীতির প্রতিচ্ছবি। আর তামিমের ভাষায়, “এখানে সবচেয়ে বড় হার ক্রিকেটেরই।”